
The Truth of Bengal: বাংলার নিজস্ব এক ঐতিহ্যবাহী এক শিল্পকলা। চিত্রপট বা বস্ত্রের ওপর আঁকা একপ্রকার লোকচিত্র। এটি প্রাচীন বাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রাচীনকালে এই পটশিল্পই বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্যের বাহক ছিল। যারা পটচিত্র অঙ্কন করেন, তাঁদের বলা হয় পটুয়া। বাংলা থেকে আজ প্রায় হারিয়ে গিয়েছে এই পটশিল্প। হারিয়ে যাওয়া সেই পটশিল্পের আজ দেখা মেলে অল্প কিছু জায়গায়। পল্লি বাংলায় আজও পটচিত্রের রামায়ণ পাঠ করে নিজেদের রুজি-রুটি জোগাড় করেন পটশিল্পীরা। অখণ্ড রামায়ণ থেকে শুরু করে রামায়ণের সাতটি খণ্ড পাঠ করে শোনান বাংলার এই প্রাচীন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা।
রামের জন্ম থেকে সীতার বনবাস, লঙ্কাযুদ্ধ সহ রামায়নের সবকিছু পর্যায়ক্রমে ছবি এঁকে তুলে ধরা হয় পটশিল্প কলায়। পটশিল্পীদের রামায়ণ গান আজ পৌঁছে গিয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিদেশের বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলার শিল্পীরা। আগের থেকে এই শিল্পের কদর কমলেও এখনও নিজেদের শিল্পসত্তা বাঁচিয়ে রেখেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার পটের গ্রাম।গ্রামটি পটের গ্রাম নামেই পরিচিত। এই গ্রামের মানুষ পটে যে ছবি আঁকেন, সেই ছবির উপকরণ নানা রং তারা নিজেরাই তৈরি করে নেনে।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ঘরেই সেই রং তারা তৈরি করেন। চিত্রকরদের পটশিল্পে যে পল্লিকলা বিদ্যার ঝলক দেখা যায় তা প্রশংসনীয়। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, পটুয়া শিল্পীরা পারিবারিক ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়েই পট আঁকতে শেখেন। পিতৃপুরুষের কাছ থেকে তারা এই বিদ্যা অর্জন করেন। পটের গানের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হয়। ছোটবেলা থেকে পরিবারের মানুষদের কাছে পটের গান শুনতে শুনতে পটুয়া পরিবারের সন্তানেরা সেই গান কণ্ঠস্থ করে ফেলে। পারিবারিক ধারা মেনে পটশিল্পীরা বাঁচিয়ে রেখেছেন এই শিল্প।