পিঠেপুলির মরসুমে মাটির সরা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎ শিল্পীরা
Potters busy making clay pots during the Pithepuli season

Truth Of Bengal: পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে তৈরির জন্য লাগে মাটির সরা। পিঠিপুলির মরসুমে সেই মাটির সরা তৈরি করছেন মৃৎ শিল্পীরা। নদিয়ার শিকারপুরের শিল্পীদের হাতে তৈরি সরা দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজারে। শিল্পীরা বলছেন,পৌষপার্বণে আশা করা হচ্ছে আরও মাটির সরা বিক্রি হবে।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন।আর সেই পৌষের সংক্রান্তিতে পিঠিপুলের চল রয়েছে বাঙালিসমাজে।ঢেঁকি ছাঁটা চালে পিঠে খাওয়ার সুযোগ এখন গ্রামবাংলাতেও কমে গেছে।তাই মেশিনেই গুঁড়ি ভাঙিয়ে এনে পিঠে তৈরি করা হয়।মকর সংক্রান্তিতে বানানো হয় হরেক পিঠে।পাটিসাপটা,চিতই পিঠে,কাঁকন পিঠে,গোকুল পিঠে,ভাজা পিঠে,নোনতা পিঠে,কত না পিঠে রয়েছে বাঙালির রসুই ঘরে।এই পিঠে তৈরি করার জন্য কষ্টও কম করতে হয় না । কথায় বলে, পেটে খেলে পিঠে সয়। পিঠের কথা সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র সর্বত্র শোনা যায়।
আর্যরা একসময় এই ঘরোয়া খাবারের অভ্যাস বজায় রাখেন। মঙ্গলকাব্যে পিঠের কথা উল্লেখ রয়েছে। মনসামঙ্গল কাব্যে বিজয় গুপ্ত লেখেন. ‘খির খিড়িয়া রান্ধ্রে দুগ্ধের পঞ্চ পিঠা, গুড় চিনি দিয়া রান্ধে খাইতে লাগে মিঠা।’ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে কবি মুকুন্দরামের লেখনীতে পিঠার বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ‘নির্মাণ করিত পিঠা বিশা দরে কিনে আটা, খণ্ড কিনে বিশা সাত-আট।’ যুগ যুগ করে বাঙালির রসনাতৃপ্ত করা পিঠের অন্দরমহলে যার সবার আগে ডাক পড়ে তা হল মাটির সরা।সেই মাটির সরা তৈরি করার জন্য নদিয়ার শিকারপুরের মৃত্ শিল্পীরা বেজায় ব্যস্ত। পৌষ সংক্রান্তিতে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে তৈরি হয় না এমন বাড়ি খুব কমই রয়েছে। আর পিঠে তৈরি করতে দরকার হয় মাটির সরা। এই সরা কিনতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিকারপুর গ্রামে বহু মানুষ ভিড় জমায়। শিমুরালি স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রয়েছে শিকারপুর গ্রাম।
এই গ্রামের প্রায় ৪০ টিরও বেশি পরিবার রয়েছে যারা বারোমাস মাটির তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্রের কাজ করতেন, তবে মাটির অভাবের কারণে বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দশটি পরিবার এসে দাঁড়িয়েছেন সমস্যার মুখে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে তাই মাটির সরা বিক্রি করতে বাড়ির সামনে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন তাঁরা। আগের তুলনায় বেড়েছে মাটির তৈরি সরা বিক্রি। মৃৎশিল্পীরা মনে করছেন,পেটুক সমাজের কাছে এই মাটির সরায় তৈরি পিঠের কদর এখনও রয়েছে। আশা করা হচ্ছে,স্বাদ বৈচিত্র্যের পরম্পরা বজায় রাখতে আগামীদিনে মাটির সামগ্রীর বিক্রিবাটা বাড়বে।