ত্রয়োদশীতে ৫১ জন কুমারীর পুজো সতীপীঠ কঙ্কালীতলায়
On Troyodashi, 51 virgins are worshiped at Satipeeth Kankalitala

Truth Of Bengal: ত্রয়োদশীতে ৫১ কুমারীর পুজো করা হয় সতীপীঠ কঙ্কালিতলায়। দেবী রূপে কুমারীদের মর্যাদার সঙ্গে পুজো করার প্রচলিত প্রথা রাঢ়বঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বীরভূমের সতীপীঠে আসেন দূর দূরান্তের পর্যটকরা।ভক্ত সমাগম হয় বেশ নজরকাড়া। কুমারী পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে, বলা যায়।
একান্নটি সতীপীঠের অন্যতম বীরভূমের কঙ্কালীতলা। ত্রয়োদশী তিথি অর্থাৎ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন এখানে ৫১ জন কুমারীর পুজো বিখ্যাত। এমনিতে সারাবছর কঙ্কালীতলায় পূণ্যার্থীদের যাতায়াত থাকলেও এই বিশেষ দিনে শান্তিনিকেতনের অদূরে এই পবিত্র স্থানের কুমারী পুজোর মাহাত্ম্যে ছুটে আসেন পর্যটকরা। ভক্তসমাগমও ছিল চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু কঙ্কালীতলায় ত্রয়োদশীর এই কুমারী পুজো কেন বিখ্যাত? কী-ই বা এর মাহাত্ম্য? তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলল নানা কথাকাহিনী। পুরাণে কথিত আছে, মহাদেব যখন সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন, তখন সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা স্থানে। তার একটি খণ্ড পড়ে কঙ্কালীতলায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের কাপাসটিকুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্য ৪৯ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুমারী পুজোর সিদ্ধান্ত নেন। তারপর কঙ্কালীতলায় বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত পঞ্চবটী বট গাছের নিচে ৫১ জন কুমারীকে পুজো করা শুরু হয়।
কঙ্কালীতলা ৫১ পীঠের অন্যতম সতীপীঠ বলে ত্রয়োদশীতে সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডকে সংকল্প করে একটি ঘটে স্থাপন করা হয়। এরপর কালীমন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নিচে ৫১ জন কুমারীর পুজো শুরু হয়। পুজো ঘিরে কঙ্কালীতলায় মেলা বসে এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়। পুজোর প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। কঙ্কালীতলার আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের ৫-৯ বছর বয়সের কুমারীদের পরিবারের সদস্যরা পুজোর জন্য নাম লিখিয়ে যায়। পরে এদের মধ্যে ৫১ জনকে নির্বাচিত করা হয়।
প্রতি বছর ত্রয়োদশীর দিন সকাল থেকে পুজোর আয়োজন শুরু হয়। কুমারীদের লালপেড়ে শাড়ি পড়িয়ে, ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এরপরে সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডকে মন্ত্রের দ্বারা একত্রিত করে সংকল্পের মাধ্যমে ঘটে স্থাপন করা হয় এবং সতীর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়। এ বছর পুজোর নির্দিষ্ট সময় ছিল সকাল ১০ টা নাগাদ। পুজো চলে চার ঘন্টা। কুমারী শিশুদের যে ভোগ খেতে দেওয়া হয়, তা প্রসাদ রূপে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় ছেলে কাঞ্চিশবর চট্টোপাধ্যায় বলেন,”গত ৪৯ বছর ধরে এই পুজো চলে আসছে। এখানে সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডকে একত্রিত করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়।”