
The Truth of Bengal: মণিপুর ভারতের পূর্ব প্রান্তের একটি পৃথক রাজ্য। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এই রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ হল লোকটাক হ্রদ। আর এই হ্রদের বুকেই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক। ৪০ স্ক্যোয়ার কিলোমিটার বিস্তৃত এই জাতীয় উদ্যানটিকে ১৯৭৭ সালে জাতীয় উদ্যান বলে ঘোষণা করা হয়।
এই ভাসমান উদ্যানটি পচনশীল জৈবাংশ ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস দিয়ে তৈরি। যাকে মণিপুরী বা স্থানীয় ভাষায় ফামডিশ বলা হয়। ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,১৮৩ মিলিলিটার। এবং এখানকার সর্বোচ্চ উষ্ণতা ৩৪ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ১.৭ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মণিপুরের এই শান্ত ভূমিতে এই কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি বিপন্ন প্রজাতির পশু, পাখি এবং গাছপালা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে। তার মধ্যে রয়েছে মণিপুরের সাংঘাই হরিণ, ২৩৩ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১০০ প্রজাতির পাখি এবং ৪২৫ প্রজাতির পশু যে তালিকায় রয়েছে ইন্ডিয়ান পাইথন এবং সাম্ভর। তবে, তিনদিক পাহাড় ঘেরা এই জাতীয় উদ্যানটি বিপন্ন সাংঘাই হরিণ বা ডান্সিং ডিয়ারের জন্য বিখ্যাত।এছাড়াও এই অঞ্চলে মালয়ান ভাল্লুক ও মারবেল্ড ক্যাট দেখা যায়। নানা রকমের জীববৈচিত্র্যের জন্য ১৯৮৫ সালে এই উদ্যানটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদাও দেওয়া হয়।
লোকটাক হ্রদে এই ভাসমান অভয়ারণ্য ছাড়াও বেশকিছু ছোট ছোট ভাসমান দ্বীপ রয়েছে। যেখানে মেলিতি নামক জনজাতির বসবাস রয়েছে এবং তাদের জীবিকা মূলত মৎসশিকার। লোকটাক হ্রদের জল অত্যন্ত স্বচ্ছ ও মিস্টি ফলে বহু রকমের মাছ দেখা যায় এই হ্রদের জলে। যা দেখতে প্রতিবছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় জমান এই দ্বীপগুলির ছোট ছোট বাড়ি বা রিসর্টে। যেখানে আপনি স্বল্প ব্যয়ে খাবার ও থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে মাত্র ৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ভাসমান কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানটি। যাঁরা মণিপুর বেড়াতে গিয়ে এই জায়গাটি মিস করে গেছেন, অথবা যাঁদের জঙ্গল ভালোলাগে তাঁরা অবশ্যই একবার ঘুরে দেখে আসুন এই অনন্য অভয়ারণ্যটি।