রাজ্যের খবর

নাব্যতা হারাচ্ছে জলঙ্গি, নদী বাঁচাতে পথে নামলো শতাধিক মানুষ

Jalangi is losing its navigability, hundreds of people took to the streets to save the river

Truth Of Bengal: মাধব দেবনাথ, নদিয়া: নদিয়ার কৃষ্ণনগরের জলঙ্গি নদীকে ঘিরে এক গভীর উদ্বেগের চিত্র উঠে এসেছে। জলঙ্গি নদী সমাজ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেভাবে নদী রক্ষার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। সম্প্রতি তারা একটি ডেপুটেশন কর্মসূচি আয়োজন করে এনএইচ দফতরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। মূলত, নদী তার স্বাভাবিক গতি ও নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে, এবং তার ফলে বিভিন্ন পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

জলঙ্গি নদীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও পরিবেশগত ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষ্ণনগরের মতো জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলে এই নদী বহুদিন ধরেই জীবন ও জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে এসেছে। একদিকে এই নদীর উপর নির্ভর করে বহু মৎস্যজীবী পরিবার, অন্যদিকে নদীর সেচ সুবিধার ওপর নির্ভর করেই বহু কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু বর্তমানে নদীটি হারাচ্ছে তার প্রাণশক্তি — গতি ও গভীরতা।

জলঙ্গি নদী সমাজ অভিযোগ করেছে যে, নদীর পাড় ঘেঁষে কংক্রিটের ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সড়ক ও রেল ব্রিজ নির্মাণ কাজের ফলে নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এসব নির্মাণ কার্যের পরিত্যক্ত সামগ্রী ও আবর্জনার স্তুপ নদীর বুকে জমে নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ থমকে গেছে। এর ফলে বৃষ্টির মৌসুমে নদী উপচে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা পার্শ্ববর্তী চাষের জমি ও বসতি এলাকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

জলঙ্গি নদী সমাজ বারবার প্রশাসনিক মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি বলে তারা জানিয়েছে। তবে, হাল না ছেড়ে তারা আবারও সক্রিয় হয়েছে। এদিন শতাধিক সদস্য নিয়ে তারা একটি স্মারকলিপি জমা দেয় এনএইচ দফতরে, যাতে দফতর যেন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তাদের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — শুধু সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে নয়, সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবেও নদী রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে নদী পরিষ্কারের কাজেও হাত লাগাতে হবে। কারণ, নদী হারালে হারাবে জীবন, হারাবে জীবিকা।

এছাড়া, তারা জানিয়েছেন যে, গত বছর কিছুটা সাড়া মিললেও সেটি পর্যাপ্ত ছিল না। এখনো নদীর গতি ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার মতো কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। তাই তাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট — যদি এখনই প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আগামী দিনে জলঙ্গি নদীর বিপর্যয় শুধু কৃষি ও জীবিকায় নয়, বর্ষাকালে ভয়াবহ বন্যার কারণেও পুরো অঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।

Related Articles