অসুস্থ সঙ্গিতশিল্পী সুপ্রকাশ, মুখ্যমন্ত্রীর দূত হয়ে দেখতে গেলেন ইন্দ্রনীল
Indranil visits ailing musician Suprakash as CM's envoy

Truth Of Bengal: এক সময়ের বিখ্যাত শিল্পী হলেন সুপ্রকাশ চাকী। তিনি সুরকার ও গীতিকার নামেই সুপরিচিত। আজকের দিনের বহু খ্যাতনামা শিল্পী ও শিক্ষকও। গুণী সেই মানুষটি আজ শহর থেকে কিছুটা দূরে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। বিখ্যাত শিল্পী সুপ্রকাশ চাকীর বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় এখন তেমন গান গাইতে পারেন না। বর্তমানে তার দিন কাটছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়ার বাড়িতে।
শিল্পীর এমন অসহয়তার খবর জানতে পারেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজের অগ্রজ, গুণীজন, বরেণ্য শিল্পীদের বরাবর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসা মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হন শিল্পী সুপ্রকাশ চাকীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই শুক্রবার সকালে শিল্পীর কোদালিয়ার বাড়িতে পৌঁছে যান রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক লাভলি মৈত্র ও স্থানীয় পুরসভার পুরপ্রধান পল্লব কুমার দাস।
এরপর সুপ্রকাশ বাবুর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন সবাই। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন, সেই বার্তা পৌঁছে দেন শিল্পীর কাছে। বর্তমানে প্রখ্যাতশিল্পী সুপ্রকাশ চাকি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আর গান গাইতে পারেন না। গ্লুকোমা জনিত সমস্যায় কমেছে দৃষ্টিশক্তিও। বাড়িতে এখন তাঁর একমাত্র সর্বক্ষণের সঙ্গী স্ত্রী সুমিতা চাকী। তবে মাঝেমধ্যে পুরনো ছাত্রছাত্রীরা আসেন। বাকি সময়তা তার চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটে। তাই আয়ের একমাত্র উৎস ছিল গান-বাজনা।
সেটি যখন বন্ধ তখন আয়ের পথ নেই। পুরনো ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া সামান্য গুরুদক্ষিণাতেই এখন সংসার চলে শিল্পীর। সেই শিল্পীকে দেখতে গিয়ে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন সঙ্গে নিয়ে ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শাল। সুপ্রকাশ বাবুর স্ত্রীর জন্য শাড়ি। নিজের তরফ থেকে শিল্পীর হাতে তুলে দেন কিছু অর্থ সাহায্য। সেই সঙ্গে মন্ত্রী আশ্বাস দেন তাঁর জন্য সরকারের তরফে যা যা করার তা করা হবে। শিল্পীর বর্তমান অবস্থা যা তিনি দেখে গিয়েছেন তা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই শিল্পীদের পাশে থাকেন, তাঁদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেন। সরকারের তরফে তাঁদের জন্য যা যা করার তা সবই করেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এইভাবে দেখে এসেছে রাজ্যের মানুষ। নানা সময়ে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পীদের নানা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। দুঃস্থ শিল্পীদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছেন। আবার পাশে দাঁড়ালেন অসহায় এক শিল্পীর।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্পীর বাড়িতে আসা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘আমরা যারা গান-বাজনার সঙ্গে যুক্ত তাঁরা সকলেই সুপ্রকাশ বাবুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। তাঁর মতো শিল্পীর গান শুনে আমরা বড় হয়েছি। শিল্পীর এমন অবস্থা দেখে প্রত্যেকেই আমরা খুব ভারাক্রান্ত। আমার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পীকে জানাতে বলেছেন, রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর পাশে আছেন। শিল্পীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে কয়েক দিনের মধ্যে এলাকায় একটি অনুষ্ঠান করব। আমি নিজে সেই অনুষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকে গান গাইবো। এলাকার বিধায়ক, এলাকার পুর প্রধান নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব রকমের খেয়াল রাখার জন্য।’
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন তাঁর বাড়িতে এসেছেন সব মিলিয়ে আপ্লুত শিল্পী সুপ্রকাশবাবু। তিনি বলেছেন, ‘আমার জন্য এই উদ্যোগ আমি কোনও দিন ভুলবনা। যত দিন বাঁচবো আমি মনে রাখবো।’ শিল্পীর সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁর স্ত্রী সুমিতা চাকী খুব খুশি এমন তৎপরতায়। তিনি বলেন, ‘এলাকার বিধায়ক লাভলি মৈত্র, পুরপ্রধান পল্লব দাস নিয়মিত আমাদের খোঁজ খবর রাখেন।’
জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে খ্যাতির গৌরব শিখরে উঠে আসা এই শিল্পীর ঝুলিতে রয়েছে সাফল্যের নানা নজির। ‘এসোনা নতুন জগত গড়ি’, ‘আমার সুখের স্বর্গ ছিল’ এমন অনেক কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন শিল্পী। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ শ্রোতাদের প্রশংসা আদায় করে নেয়।
সৃষ্টির ভুবনে যাঁরা স্বনামধন্য, যাঁদের অবদান বিরাট তাঁদের পাশে দাঁড়াতে কোনও কার্পণ্য করেন না মুখ্যমন্ত্রী। বহু শিল্পীর ক্ষেত্রে বার বার এটা দেখা গিয়েছে। এবার সুপ্রকাশ চাকীর মতো স্বনামধন্য শিল্পীর পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পীর জন্য রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী নিজে কী করতে চান, তা মুখ্যমন্ত্রীর দূত হিসেবে শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে জানিয়ে এলে।