বর্গী হানার পুরোনো দিনের কথা জানতে চান? ব্যাগ গুছিয়ে ঘুরে আসুন লালমাটির দেশ থেকে
Garpanchokot Tour Plan

The Truth of Bengal: যাবেন নাকি লালমাটির জেলায় লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের সাক্ষী হতে? জানতে চান বর্গী হানার পুরনো দিনের কথা? তবে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে যেতেই পারেন পুরুলিয়ার পঞ্চকোটে। যেখানে রয়েছে সনাতনী স্থাপত্যের নানা কাজ। পাহাড়ের কোলে মাথা রেখে আপনি শুনতে পাবেন অতীতের নানা কথা। অপরূপ দৃশ্য চাক্ষুষ করলে আপনার মন ভরে যাবে।
বিশ্বকবি লিখেছেন, বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে,
বহু ব্যয় করি,বহু দেশঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই,ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিশের ওপর একটি শিশিরবিন্দু।
একদম ঠিক ধরেছেন, ভ্রমণবিলাসী বাঙালিরা প্রায়শই চলে যাই দূর দূরান্তে।কিন্তু জানেন কি এই রূপসীবাংলাতেই রয়েছে এমনকিছু পর্যটনকেন্দ্র যেখানে গেলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।সেরকমই এক বেড়ানোরা জায়গা হল গড় পঞ্চকোট।ইতিহাস আর প্রকৃতির সুন্দর মেলবন্ধনে মাথা তুলে থাকা গড় পঞ্চকোট চাক্ষুষ করলে আপনার মন চাইবে আরও একবার দেখতে। কথিত আছে, দামোদর ও পাঞ্চেত পাহাড়ের কোলে একসময় পঞ্চকোট রাজারা তাদের রাজধানী গড়ে তুলেছিলেন। প্রায় দু’হাজার বছর আগে পঞ্চকোট শিল্পসংস্কৃতির শীর্ষে উঠেছিল। পাহাড় জুড়ে ভাঙা দেউল ও দুগের্র ভগ্নাবশেষ অতীতের কত কথা বহন করে চলেছে। বলা যায়,দেউলগুলির অপরূপ গঠনশৈলী পুরনো আমলের শিল্পের উৎকর্ষের পরিচয় বহন করে।
ইতিহাস বলছে, বর্গী আক্রমণে এই বাংলা বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে। জানেন কি সেইসব বর্গীরা এই অঞ্চলের উপর দিয়েই বাংলায় প্রবেশ করে। লুটপাট ও খুনজখমের হাত থেকে সেসময় রেহাই পায়নি এই পঞ্চকোটের মানুষ। বর্গীহানার স্মৃতি বুকে নিয়ে এখনও রয়েছে পঞ্চরত্ন মন্দির, ওয়াচ টাওয়ার, পঞ্চরত্ন রাস মন্দির, কঙকালী মাতার মন্দির। আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে পঞ্চকোটের সংযোজন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছ’টি সনেটের মধ্য দিয়ে। বাংলা সাহিত্যে ‘পুরুলিয়া’ শব্দটি তিনিই প্রথম ব্যবহার করেন। জীবনসায়াহ্নে কবি কাশীপুরে কাটিয়েছিলেন মহারাজা নীলমণি সিংহদেওয়ের রাজদরবারে। এই নীলমণি সিংহদেওয়ের সভাগায়ক ছিলেন যদুভট্ট এবং তাঁর পিতৃদেব মধুসূদন ভট্টাচার্য। যদুভট্টকে ‘রঙ্গনাথ’ উপাধি দেওয়া হয়। ভাদুগানেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নীলমণি সিংহদেও।
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে পঞ্চকোটের অবদান অনস্বীকার্য। ১৭৯৫ সালে খাজনা ঠিক সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেরেস্তায় না পৌঁছনোয় পঞ্চকোট রাজ্য নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানি। পঞ্চকোটের প্রজারা তখন ঘোষণা করেন, ‘পঞ্চকোট রাজ ছাড়া, আর কাউকে খাজনা দেওয়া না’। শেষ পর্যন্ত কোম্পানি নিলাম রদ করে পঞ্চকোট রাজকে তাঁর রাজ্য ফেরত দেয়। ১৭৯৯-য় জয় হয় পঞ্চকোটের প্রজাদের। ইতিহাসে এ ঘটনা চুয়াড় বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘটনা হিসাবে খ্যাত।ইতিহাসের নানা ঘটনার সাক্ষী এই পঞ্চকোটের পরতে পরতে রয়েছে নানা কাহিনী। এখানে রয়েছে নানা মন্দির। রয়েছে পঞ্চরত্ন টেরাকোটা নির্মিত দক্ষিণ ও পূর্বদুয়ারী রাস মন্দির।
পঞ্চকট গড়ের পশ্চিমদিকে রয়েছে পাথরের তৈরি কঙ্কালী মায়ের মন্দির।এছাড়াও আছে কল্যাণীশ্বরী দেবীর মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।পাহাড়ের পাদদেশে রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ,এখনও ঐতিহ্যের ছাপ বয়ে করে নিয়ে চলেছে।নিতুড়িয়া ব্লকের পাহাড় ঘেরা এই এলাকায় পর্যটনের আরও প্রসার ঘটাতে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পর্যটনকেন্দ্রে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি, এলাকায় স্বাধীন ব্যবসারও অনেক সুযোগ হয়েছে। রয়েছে গড় পঞ্চকোটের বন উন্নয়ন নিগমের ‘প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র’।থাকা-খাওয়ার সবসুযোগই এখানে রয়েছে। রেলপথে আপনি যেতে পারেন পুরুলিয়া। গড়পঞ্চকোটের নিকটবর্তী স্টেশন হলো বরাকর। সেখান থেকে সরাসরি গড়পঞ্চকোটে যাবার গাড়ি পেয়ে যাবেন। কলকাতা থেকে ভলভো বাস এ করে আপনি আসতে পারেন আসানসোল। সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে বরাকর হয়ে সোজা চলে যেতে পারেন গড়পঞ্চকোটে।