বাবার শেষ ইচ্ছে! নিজের হাতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে দেবী আরাধনা করবেন একমাত্র ছেলে
Father's last wish! The only son will worship the goddess by making an idol of Durga with his own hands

Truth Of Bengal: নদিয়া,মাধব দেবনাথ: মৃত বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণে ৩০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্গাপুজো পুনরায় শুরু করছেন হস্ত চালিত তাঁত শ্রমিক একমাত্র ছেলে। জানেন না মৃৎ শিল্পীর কাজ, নিজে তাঁত শ্রমিক হয়েও তৈরি করলেন ৮ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা, পুজোর খরচ যোগাতে পাশে দাঁড়ালেন এলাকার মানুষ।
হ্যাঁ এমনই এক হস্ত চালিত তাঁত শ্রমিক দরিদ্র পরিবারের কথা না বললেই নয়। নদীয়ার শান্তিপুর পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুত্রাগড় অঞ্চলের চুনুরি পাড়ার বাসিন্দা। পেশায় তাঁত শিল্পী গৌতম ঘোষের বাড়ি থেকে উঠে এলো এমনই এক কাহিনী। বর্তমানে তাঁত শ্রমিক গৌতম ঘোষ জানাচ্ছেন, তার বাবা এক বছর আগে পরলোক গমন করেছেন। বাবা ছিলেন পেশায় তাঁত শ্রমিক।
ছোটবেলায় বাবার হাতেই তাঁত বোনা শেখা তার। কিন্তু দরিদ্র পরিবার হলেও সারা বছর অর্থ জোগাড় করে ছোট মাতৃ মূর্তি দিয়ে বাড়িতে দুর্গাপুজো করতেন। কিন্তু হঠাৎ হস্ত চালিত তাঁতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে যায়, তিলে তিলে ধ্বংসের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে যায় এই শিল্প। এরপর সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায় ৩০ বছর আগে। গত এক বছর আগে বাবা যখন প্রয়াত হন ছেলে গৌতম ঘোষকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে যান, যদি পারিস আবার দুর্গা পুজো করার চেষ্টা করিস।
পরিবারের কথায়, দেবী খুবই জাগ্রত, মাঝেমধ্যেই তার কিছু সংকেত কিছুটা বুঝতে পারেন, অন্যদিকে ছেলে গৌতম ঘোষেরও ইচ্ছা বাবার কথা রাখবেন। সেইমত সারাদিন তাঁত বুনে নির্দিষ্ট একটি সময়ে শুরু করলেন দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ। প্রথমে ভেবেছিলেন ছোট করে মাতৃ মূর্তি তৈরি করবেন, কিন্তু প্রতিমা গড়তে গড়তে তার উচ্চতা হয়ে যায় ৮ ফুটেরও বেশি। গৌতম ঘোষ কোন দিনই মৃৎ শিল্পীর কাজ করেননি, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অদম্য ইচ্ছে ছিল বিভিন্ন মাতৃ মূর্তি প্রতিমা তৈরি করবেন।
ছোট বয়সে নিজের হাতেই তৈরি করেন বেশ কয়েকটি প্রতিমা, আর সেই প্রচেষ্টাতেই বাবার শেষ ইচ্ছে রাখতে এবার সুদর্শন দুর্গা প্রতিমা পুরাই তৈরি করে ফেললেন। পরিবারের কথায়, পাঁচ দিনের দেবী আরাধনায় খরচ অনেকটাই, প্রতিমা তো প্রায়ই তৈরি হলো কিন্তু পুজোর খরচ কিভাবে যোগাড় হবে। সেই সময় এলাকার স্থানীয়রা পাশে এসে দাঁড়ান, তারা আশ্বস্ত করেন প্রত্যেকেই আর্থিক সহযোগিতা করবেন। যদিও গৌতম ঘোষের এহন প্রচেষ্টায় মন জয় করে নিয়েছে এলাকার মানুষের। নিজে একজন তাঁত শিল্পী হয়েও কিভাবে সুদর্শন দুর্গা প্রতিমা তৈরি করলেন।
তবে দেবী আরাধনার আর মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা দিন বাকি, দরিদ্র পরিবার হলেও এখন থেকে শুরু হয়েছে জোড় কদমে প্রস্তুতি। এখন দিন গুনছে পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে এলাকার মানুষ। অন্যদিকে তাঁত শিল্পী গৌতম ঘোষ বলছেন, একদিকে আর জি করেন নৃশংস ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, অন্যদিকে এলাকার মানুষের মঙ্গল এবং সর্বস্তরের মঙ্গলের জন্য তিনি দেবীর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করবেন।