নিজের প্রথম পক্ষের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার পিতা
Father arrested for murdering his first-born child

Truth of Bengal: নিজের প্রথম পক্ষের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক ব্যক্তি। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার পুলিশ তাঁকে তাঁর তৃতীয় পক্ষের স্ত্রীর বাড়ি থেকে পাকড়াও করেছে। ১২ বছর নিখোঁজ থাকার পর একটি নাবালকের মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধারের প্রায় এক বছর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ‘মূল চক্রী’। খোঁজ চলছে মৃতের সৎমায়েরও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতের নাম আরজেদ শেখ ওরফে বাবু। তিনি ভগবানগোলা থানার কুঠিরামপুর পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর প্রথম স্ত্রী জেসমিনা বিবির মৃত্যুর পর তিনি সাগোরা বিবিকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই দাম্পত্য সুখের হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রী সাগোরা প্রথম পক্ষের সন্তানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। পারিবারিক অশান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে দুই সন্তান, আরজিনা খাতুন ও আশরাফুলকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আরজেদ।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে পারিবারিক অনুষ্ঠানে দুই সন্তানকে বাড়িতে ফেরান আরজেদ। পরে মেয়েকে মামার বাড়িতে পাঠালেও ছেলে আশরাফুল তাঁর কাছেই থেকে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পর হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্র। ছেলের খোঁজ না পেয়ে আরজেদ নিজেই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো সন্ধান পায়নি।
এদিকে, কিছুদিনের মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রী সাগোরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন আরজেদ এবং তৃতীয়বার বিয়ে করে জিয়াগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ফলে রামপুরের বাড়িটি ফাঁকা পড়ে থাকে।
২০২3 সালের ১৫ জুলাই, আরজেদ শেখের মেয়ে আরজিনা খাতুন বাপের বাড়ির পেছনে একটি জমিতে মাটি কাটানোর কাজ করছিলেন। কিন্তু কোদালের কয়েক কোপ দিতেই উঠে আসে একটি হাফ প্যান্ট। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে হাড়গোড় ও একটি মাথার খুলি। এলাকাজুড়ে শুরু হয় চাঞ্চল্য। আরজিনা নিশ্চিত হন, এগুলো তাঁর দীর্ঘদিনের নিখোঁজ ভাইয়ের দেহাবশেষ।
পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হয় যে, আশরাফুলকে খুনের পেছনে তাঁর বাবা আরজেদ এবং সৎমায়ের হাত রয়েছে। ততদিনে আরজেদ চেন্নাইতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন। পুলিশ তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখে এবং নজরদারি চালায়।
চেন্নাই থেকে ফিরে উত্তর ২৪ পরগনার বারুইপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন আরজেদ। পরে তিনি তৃতীয় পক্ষের স্ত্রীর বাড়িতে যান। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে।
ভগবানগোলা থানার এসডিপিও উত্তম গড়াই জানান, ‘‘তদন্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছেন আরজেদ।’’ উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার ধৃতকে লালবাগ মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্য অভিযুক্ত সাগোরা বিবিকে গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।