রাজ্যের খবর

পুজোয় দশভূজা মা দুর্গা নন পুজো পান অষ্টভূজা সিংহবাহিনী

Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: পিতৃপক্ষের সূচনা হয়ে গেছে। চারিদিকে এখন পুজো পুজো গন্ধ। আর ক’দিন পরেই দেবীপক্ষ। “আদ্যাশক্তি মহামায়া”-র জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আপামর বঙ্গবাসী। কিন্তু এই বাংলায় আছে কয়েকটি এমন গ্রাম যেখানকার বাসিন্দারা পুজোয় মাতেন না। পুজোর ক’টা দিন আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই নিরুত্তাপে কাটান গ্রামবাসীরা। হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুরের বালিয়া পরগনায় দুর্গাপুজো নিষিদ্ধ। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের নিজবালিয়া, গড়বালিয়া, যমুনাবালিয়া, নিমাবালিয়া ও বাদেবালিয়া, বালিয়া-ইছাপুর, বালিয়া-রামপুর, বালিয়া-প্রতাপপুর, বালিয়া-পাইকপাড়া গ্রামে দুর্গাপুজোর ক’দিন দশভূজা মা দুর্গা নন পুজো পান গ্রামের মন্দিরের আরাধ্যা দেবী অষ্টভূজা সিংহবাহিনী।মুঘল আমলে সম্রাট আকবর তাঁর শাসনকালে অবিভক্ত বাংলা ও নানা প্রদেশে বিভিন্ন পরগনা গড়ে তোলেন। এই পরগনার মধ্যে বালিয়া পরগনা ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে আকবরের আমল থেকেই পরিচিত জগৎবল্লভপুরের বালিয়া পরগনা।

আজকের ১২টি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠে সেদিনকার বালিয়া পরগনা।নিজবালিয়া গ্রামে আছে শতাব্দী প্রাচীন দেবী সিংহবাহিনীর মন্দির। বালিয়াযুক্ত কোনো গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। কেউই এই নিষেধ ভাঙার চেষ্টা করেনি। কেউ বলেন মন্দিরটি আনুমানিক ৬০০ বছরের পুরোনো। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল বা বলরাম চক্রবর্তীর কালিকামঙ্গলে রয়েছে দেবী সিংহবাহিনীর উল্লেখ।কথিত আছে, ১৮ শতকে বালিয়া পরগনায় আক্রমণ করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। বর্ধমানের সেই মহারাজা স্বপ্নে দেবী সিংহবাহিনীর দেখা পেয়ে নিজবালিয়া গ্রামে মন্দির গড়েন। কয়েক একর জমি মন্দিরের জন্য দান করেন। দেবী সিংহবাহিনী ছিলেন বর্ধমানের মহারাজার কূলদেবী। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এক সময় এলাকায় কলেরা মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। পরিত্রাণ পেতে দেবী সিংহবাহিনীর আরাধনা শুরু করেন গ্রামবাসীরা।

সেই থেকে নির্মিত হয় মন্দির।মন্দিরের নাটমন্দিরে আছে নিমকাঠে নির্মিত দেবী সিংহবাহিনীর অষ্টভূজা বিগ্রহ। সাদা রঙের সিংহের ওপর দাঁড়িয়ে আট হাতওয়ালা দেবী। কথিত আছে, স্বয়ং বিশ্বকর্মা মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেবীর আদেশানুসারে নিমকাঠে খোদাই করে দেবী সিংহবাহিনীর মূর্তি গড়েন। সালঙ্কারা দেবীর গায়ের রঙ সোনার মতো। তাঁর ৭ হাত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আর আরেক হাত দিয়ে তিনি ভক্তদের বরাভয় দান করছেন। দেবীর পিছনে চালচিত্রের মাথায় নন্দী সহ মহাদেব এবং দুই দিকে দশমহাবিদ্যা ও বিষ্ণুর দশ অবতার অঙ্কিত আছে। ১২ বছর অন্তর মূর্তি রঙ করা হয়। আটচালা আকৃতির মন্দির। স্থানীয় পুকুরের মাছ দেবীকে প্রতিদিন ভোগে নিবেদন করা হয়। দেবী সিংহবাহিনী যেহেতু দুর্গাই ভিন্ন রূপ তাই বালিয়া অঞ্চলে কোথাও শারদীয়া দুর্গা পূজা হয় না। এলাকার মানুষজন দুর্গা পূজার কয়েকদিন মা সিংহবাহিনীকেই দুর্গা রূপে পূজা করেন ও অঞ্জলি দেন। নবমীতে হয় বলিদান।

Free Access

Related Articles