জানেন কি বাংলার প্রাচীন তাসের ইতিহাস? কী রহস্য লুকিয়ে ‘দশাবতার তাসে’
Bengal's ancient card history? What secrets are hidden in the 'Dasavatar Tase'

The Truth of Bengal: আপনারা অনেকেই তাস খেলেন, বর্তমানে যে তাস বাজারে দেখতে পাওয়া যায়, বা সর্বাধিক খেলার প্রচলন রয়েছে, তার উদ্ভব হয়েছে ইউরোপ থেকে। কিন্তু তারও আগে প্রাচীনকাল থেকে তাস খালের ইতিহাস মেলে। পারস্য, আরব ইজিপ্টেও প্রাচীনকালে তাস খেলার প্রচলন ছিল। কিন্তু জানেন কি এই বঙ্গতেও, হাজার বছর আগেই এক তাসখেলার প্রচলন শুরু হয়। তা মূলত রাজার প্রাসাদেই খেলা হত। দশাবতার তাস। ভগবান বিষ্ণুর ১০টি অবতার কে নিয়েই তৈরি প্রধান ১০টি তাস। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে একটা সময় ছিল মল্লরাজাদের ঘাঁটি বা গড়। এখানকার ইতিহাস, সংস্কৃতি হয়তো বাঙালিদের কাছে অনেকটাই জানা। কিন্তু যে বিষয়টি অনেকেই হয়তো জানেন না, তা হল, এই রাজঘরানার খেলা। খাস এই মল্লভূম থেকেই জন্ম নিয়েছিল বিখ্যাত দশাবাতার খেলার প্রচলন।
বিষ্ণুপুরে সংস্কৃতি ও বৈচিত্র এক সময় কোন শিখরে পৌঁছেছিল তা এই খেলার মধ্যে বেশ কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। হিন্দু সংস্কৃতিতে বিষ্ণুর দশ অবতারের কন্সেপ্টটি অনেকটাই প্রাচীন। কিন্তু এই খেলার মধ্যে দশ অবতারের সংযোজন ও রঙের ব্যবহার ঠিক কতটা প্রাচীন তা বলা মুশকিল তবু অনুমাণ কম করে হাজার বছরের পুরনো রীতি রয়েছে এই খেলায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দশ অবতার নিয়ে মোট ১২০টি তাস রয়েছে, আর তা নিয়েই খেলা। মোট খেলোয়াড় থাকেন ৫ জন। প্রায় সারাদিন ধরেই চলতে এই খেলা চলতে পারে। ইতিহাসবিদ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৮৯৫ সালে জার্নাল অফ এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলে এই দশাবতার নিয়ে একটি ছোট নোটও দেন। তাঁর মতে এই খেলা শুরু হয়েছিল ১১০০-১২০০ বছর আগে।
এই তাস তৈরিও করা হয় এক অদ্ভুত পদ্ধতিতে। সাধারণ কাগজের তৈরি নয়। মোটা কাপড়ে, তেঁতুলের বীচির আঠা দিয়ে মাড় তৈরি করা হয়। তারপর সেই পাতের ওপর নানা রং দিয়ে আঁকা হয় দশ অবতারের ছবি। অবতারের রংও এই খেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একটা সময় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে খেলা হত প্রাচীন এই তাস। এখন সময়ের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। যদিও কেই চাইলে, স্থানীয়দের কাছে এই খেলা শিখতে পারেন। এবং বিষ্ণুপুর সফরে গেলে, ঘর সাজানোর জন্য স্থানীয় শিল্পীদের হাতের তৈরি দশাবতার তাস কিনে আনতেই পারেন।