রাজ্যের খবর

মঙ্গল কামনা করে বৃক্ষদেবের আরাধনা,আশীর্বাদ লাভের আশায় ভক্তসমাজ

Adoration of Vrikshadeva for good wishes

The Truth of Bengal: গাছই ভগবান।এই দেবজ্ঞানে বৃক্ষ পুজো করা হয় নদিয়ার হাঁসখালিতে। বৃক্ষদেবকে প্রার্থনা করলে শরীরের রোগ থেকে মনের ইচ্ছে পূরণ হতে পারে বলে বিশ্বাস অনেকের। ইছামতী নদীর তীরে এই দেবস্থানে ভক্তরা পুজোপাঠে অংশ নেন। কেউ কেউ বলেন, পাগলা বাবার ধাম। সেই পাগলা বাবার ধামে অসংখ্য মানুষ আসেন অরন্ধন দিবস পালন করতে। বাড়িতেই  ভাত রান্না করে ভক্তরা এখানে খান। কার্যতঃ মানুষের মিলনমেলা  হয়ে ওঠে এই বিশেষ মেলা।

সভ্যতার সূচনাকাল থেকে সবুজ বৃক্ষকে পুজো করে আসছে মানুষ।মনুষ্যসমাজ বিশ্বাস করে,বৃক্ষদেবকে পুজো করলে বা তুষ্ট করলে জগত্সংসারের কল্যাণ হয়।বিশ্বাস করা হয়, নারায়ণ সেই বৃক্ষদেবের আরাধনাকারীদের আর্শীবাদ করেন।বটবৃক্ষ বা অশ্বথ গাছকে আমরা নারায়ণ রূপেই পুজো করি। চৈত্র –বৈশাখ মাসে নাকি গাছের গোড়ায় জল দিলে জীবনে স্বস্তি মেলে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের। আর এই রীতিকেই মান্যতা দিয়ে নদিয়ার হাঁসখালিতে বৃক্ষদেবকে পুজো করার চল রয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা ঘোড়ামারি ডাঙা ও ঘোড়ামারি মাঠে এই উপলক্ষে বসে বিশেষ মেলা। জটাধারী শিব নাকি এখানকার জ্ঞানেন্দ্রনাথ মৌলিক নামে এক প্রবীণ  ব্যক্তিকে নিয়ে গিয়ে দীক্ষা দেন। ধান্যস্থ অবস্থায় তাঁকে দেখে যায়।ধ্যান মগ্ন অবস্থা কাটলে তিনি জানান,জটাধারী শিব গ্রামের মানুষকে আর্শীবাদ করতে চান। তারপর থেকেই দেবতার আর্শীবাদ পেতে ফতেপুর,ঘোষ কমলপুর,মোবারকপুর,পেপুল বেরিয়া,ছুটিপুর সহ অসংখ্য গ্রামের মানুষ এখানে মিলিত হন। অরণ্যদেবের প্রতি বিশুদ্ধভাবে পুজোপাঠ করে জগত্ সংসারের মঙ্গল কামনার এই রীতি সত্যিই এই উষ্ণায়নের যুগে আলাদা তাত্পর্য বহন করে।

এই পুজোয় নেই কোন নিয়ম বিধি । গ্রামবাসীরা আগের দিন রাতে ভাত রান্না করে জল দিয়ে রাখেন আর পরের দিন দশেরা তিথিতে সেই ভাত খেয়ে থাকে,পালিত হয় অরন্ধন দিবস। সাধারণ মানুষ সমস্ত কিছু ভুলে সামাজিক মিলনমেলায় অংশ নেয়। ঘোড়ামারি , ডাঙাপাড়া নামে পরিচিত এই মাঠ আগে ছিল ফাতেপুরবাসী মৌলিক পরিবারের। দেশ ভাগের পরে বেশ কিছুকাল কেটে গিয়েছে। আগে এই মেলা কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ভক্তরাও আসতেন পুজো দিতে। বর্তমানে সীমান্তে কাঁটাতারের জন্য দুপারের মানুষের আর একজায়গায় মিলিত হওয়ার সুযোগ হয় না। গ্রামের অনেকেই নাকি সেই যোগী বাবাকে দেখেছে, তারপর লোক বিশ্বাস ও সংস্কারের বশে মানুষ ভয়ে ভক্তিতে এই বিশেষ তিথিতে ভিড় জমায়। স্থানীয় বাসিন্দা,দের মতে, ধনী-দরিদ্র হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে মানুষ  মাটির উপরে বসে বনভোজনের মতো খাবার খায়। পাশাপাশি এই মেলা উপলক্ষে সমস্ত রাজনৈতিক রং ভুলে গিয়ে একত্রিতভাবে সকলে মিলে হাতে হাত রেখে কাজ করেন। গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বিএসএফ জওয়ানরা। পুণ্যার্থী ও ভক্তদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেই জন্য তারা পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। গ্রাম বাংলার মানুষ যেভাবে সবুজ বৃক্ষের পুজোপাঠ করছে এভাবে আপামর জনসাধারণ গাছের পুজো করলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা যে সম্ভব তা মেনে নিচ্ছেন এখানকার বৃক্ষদেবের আরাধনাকারীরাও।

Related Articles