মহাধুমধামে পালিত মাহেশের স্নান যাত্রা, ভগবান-ভক্তের মিলন ঘিরে উন্মাদনা
A huge gathering of devotees can be seen in the month of Hooghly

The Truth of Bengal: শনিবার ধর্মীয় রীতি মেনে জগন্নাথের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। হুগলির মাহেশে লক্ষ্য করা যায় বিপুল ভক্ত সমাগম। প্রভু জগন্নাথকে ভোর ৫টায় গর্ভগৃহ থেকে মূল মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬২৮বছরের মাহেশের রথযাত্রার মহাধুমধাম আলাদা অনুভূতি বয়ে আনে। দেশ-বিদেশের ভক্তরাও পুণ্যভূমিতে প্রভুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন, নিয়ে যান জগন্নাথের আর্শীবাদ ।
“বসেছে আজ রথের তলায় স্নানযাত্রার মেলা সকাল থেকে বাদল হল ফুরিয়ে এলো বেলা ” প্রতি বছরের মতো এবছরও আড়ম্বরের সঙ্গে স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয় মাহেশে।ভোর ৫টায় প্রভু জগন্নাথকে গর্ভগৃহ থেকে মূল মন্দিরে আনা হয়।৬টা ২০ মিনিট থেকে শুরু হয় স্নানযাত্রা উৎসব। স্নান পিড়ি মাঠে অগণিত ভক্তের সমাবেশ। রীতি মেনে স্নানমঞ্চে ২৮ ঘড়া গঙ্গাজল এবং দেড়মণ দুধ দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে। ভক্তদের বিশ্বাস দুধ ও গঙ্গাজলে স্নান করার পর তিন দেবতার জ্বর আসে। মন্দির বন্ধ রেখে এরপর শুরু হয় তাঁদের সেবা-শুশ্রূষা। কবিরাজের পাঁচন খেয়ে তাঁরা সুস্থ হন।সময় বয়ে চলে গেলেও ঐতিহ্যের মাহেশের রথযাত্রার জৌলুস যে এতটুকু কমেনি তা বলাই যায়।এখনো স্নানযাত্রার দিন মন্দির জুড়ে বসেছে মেলা, সারাদিন ব্যাপী মানুষজন এসে ভিড় করেন জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎসবে প্রত্যক্ষ করেন প্রভু স্নান আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন নিজ নিজ পরিবারের জন্য, উপরি পাওনা হিসেবে তাদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকে এখানকার মেলা, কিন্তু মেলার আকর্ষণ বর্তমানে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।তবে ভগবান আর ভক্তের মিলন উত্সব সবার কাছে বিশেষ আকর্ষণ বয়ে নিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে।
শনিবার সকাল থেকে কয়েক হাজার ভক্ত হাজির হন জগন্নাথ দেবের স্নান মন্দিরের তলায়।বহু প্রাচীনকাল থেকে স্নানযাত্রা উৎসব বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় মাহেশে। অতীতে এই স্নানযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে হাজির হতেন এখানে, বিভিন্ন বাড়িতে লেগে থাকত আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা। এই উৎসবকে ঘিরে এক বিশাল মেলা বসত স্নানপিরি মাঠ এবং মন্দিরের আশপাশ চত্বর জুড়ে, তবে যত দিন যাচ্ছে যত আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের সমাজকে গ্রাস করছে ,তার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত পুরনো যে সামাজিক অনুষ্ঠান, সামাজিক রীতিনীতি গুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ থেকে তা সত্ত্বেও মাহেশের প্রভু জগন্নাথের স্নানযাত্রার আবেগে এতোটুকু ভাটা পড়েনি।
মাহেশের একটি বিশেষত্ব আছে প্রতিবছর স্নানের দিন মন্দির চত্বরে একটি নীলকন্ঠ পাখির দেখা পাওয়া যায়। যতক্ষণ প্রভূর স্নান-পর্ব চলে ততক্ষণ এই পাখিটি সেখানেই থাকে তারপর স্নানের পর পাখি চলে যায় নীলাচলের পথে। সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতির পর প্রভুকে নিয়ে যাওয়া হবে আবার মূল মন্দিরে, সেখানে তিনি যাবার পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, এই সময়টুকু কোন কোলাহল চেঁচামেচি হয় না।ষ এরপরই প্রভুর জ্বর আসবে সুদূর আরামবাগ থেকে বৈদ্য এসে তার চিকিৎসা করবেন। তারপর শুরু হবে নবযৌবন উৎসব, প্রভুকে নতুনভাবে ভেষজ রঙে সাজিয়ে তোলা হবে এবং এই নবযৌবন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ৫ এবং ৬ জুলাই ,বিশাল এই উৎসবের পরের দিন মাহেশের ৬২৮ বছরের প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ওই দিন জগন্নাথ দেব বলরাম এবং সুভদ্রা মা রথে চড়ে মাসির বাড়ির দিকে রওনা দেবেন।