ভ্রমণ

অন্যতম অফবিট ডেস্টিনেশন ইয়েলবং,উত্তরবঙ্গের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

Offbeat destination Yelbong

The Truth of Bengal,Mou Basu: উত্তরবঙ্গে যেন প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে সাজিয়ে তুলেছে। অনেক অজানা অচেনা প্রাকৃতিক মণিমুক্ত ছড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের আনাচে কানাচে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম অফবিট ডেস্টিনেশন এই ইয়েলবং।উত্তরবঙ্গের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বলা হয় ইয়েলবংকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় পাথুরে জমির মধ্যে কলোরাডো নদী বয়ে গেছে। সেখানে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সব চেয়ে বড়ো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। এমনও গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বাংলাতেও রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ, উভয় জায়গায় রয়েছে নদীখাত বা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় শিলাই নদীর তীরে গনগনিতে যেমন রয়েছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। তেমনই উত্তরবঙ্গের কালিম্পংয়ের কোলে লুকিয়ে রয়েছে বাংলার আরেক ক্যানিয়ন, ইয়েলবং। নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত এই ইয়েলবং। পাহাড়ি গ্রামের পাশেই লুকিয়ে এমন এক নদীখাত খুঁজে পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রান্সিস রাই। পাহাড়, জঙ্গল, নদী—সব মিলিয়ে লুকোনো রত্ন ইয়েলবং। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা জুড়ে অবস্থিত নদীখাতটি।পাহাড়ি নদী পাথরের গা বেয়ে চলে গেছে। সেখানেই গড়ে উঠেছে রিভার ক্যানিয়ন কেভ। দু’ ধারে বড়ো বড়ো পাথর, তার মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে পাহাড়ি নদী রমতি। নদীর ধারেই রয়েছে ঘন জঙ্গল। নদীখাত জুড়ে রয়েছে ছোটো ছোটো নুড়ি-পাথর। আর তার দু’ পাশে ঘেরা উচুঁ সবুজ উপত্যকা। নদীখাতের সঙ্গে এখানে একটি গুহাও রয়েছে। নদীর উপর পাথুরে রাস্তা পেরিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন জলপ্রপাত।

কীভাবে যাবেন ইয়েলবং?

কালিম্পংয়ের অন্যান্য পাহাড়ি গ্রামের মতোই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ইয়েলবং। নিউ মাল জংশন বা শিলিগুড়ি থেকে আপনাকে যেতে হবে বাগরাকোট ফরেস্ট চেকপোস্ট। এই ফরেস্ট চেকপোস্ট থেকে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন ইয়েলবং গ্রাম। শিলিগুড়ি বা নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। শিলিগুড়ি ও নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে বাগরাকোট ফরেস্ট চেক পোস্টের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। এখান থেকে ইয়েলবং-এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার।

কী দেখবেন?

সাধারণত পাহাড়ি গ্রামে বৌদ্ধমঠ থাকে। কিন্তু এই গ্রামে রয়েছে একটি গির্জা।
ইয়েলবং গ্রাম থেকেই ট্রেক করে পৌঁছোতে হয় ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন কেভে। ইয়েলবং গ্রাম থেকে ৪-৫ ঘণ্টা ট্রেক করলে আপনি পৌঁছে যাবেন রামতি নদীর খাতে। ক্যানিয়নের রাস্তা খুব একটা মসৃণ নয়। রামতি নদীর পাড় ধরে পাথুরে রাস্তা ধরে পৌঁছোতে হয় ক্যানিয়নে। ক্যানিয়নে পৌঁছে মনে হবে না, যে আপনি কালিম্পংয়ের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যানিয়নের মধ্যে সাবধানে হাঁটতে হবে। ক্যানিয়নের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় কোমর পর্যন্ত জল রয়েছে। আবার কোথাও গলা পর্যন্ত জলও মিলতে পারে। ট্রেক করতে হলে গ্রাম থেকে গাইড নিতে হবে।
ক্যানিয়ন ছাড়াও আপনি ইয়েলবং থেকে রেনবো জলপ্রপাত ও থ্রি-স্টেপ জলপ্রপাত ঘুরে আসতে পারেন। রামতি নদী একাধিক ছোট বড়ো জলপ্রপাত তৈরি করেছে। রেনবো জলপ্রপাতে দেখতে পেতে পারেন রামধনু। রেনবো জলপ্রপাত দেখতে গেলে আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে। যাঁরা অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকেন, তাঁদের জন্য সেরা ডেস্টিনেশন এই ইয়েলবং। রামধনু দেখার সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর।

কোথায় থাকবেন?

কালিম্পঙের পাহাড়ি জেলায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ইয়েলবংয়ে থাকার জায়গা বলতে রয়েছে হোম স্টে। বেড়ানোর সঠিক সময় গরমকাল। গরমে ট্রেকিংয়ের মজাই আলাদা। ইয়েলবং গ্রাম থেকে ২৫ মিনিট হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় ঘীস নদীর শাখা রামতি নদীর তীরে। নদীতীরের পাথরের ওপরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে।

Related Articles