
The Truth of Bengal: ব্রিটিশ যুগে বাংলার এক বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন এই হাজারদুয়ারি বিশালাকার এই প্রাসাদে প্রত্যেকটি হলঘর অনুপম সৌন্দর্যের আলোকে সজ্জিত। মুর্শিদাবাদে আসলে হাজারদুয়ারিতে আপনাকে আসতেই হবে হাজারদুয়ারি আছে ইতিহাসের সেই গভীরতা। বাংলাr সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারক বাহক এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য। বাংলার সম্পদ। উল্লেখ্যযোগ্য ঐতিহাসিক পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল হাজারদুয়ারি। মুর্শিদাবাদের লালবাগ নামক অঞ্চলে যার অবস্থান এই প্রাসাদটি বহু দরজা বিশিষ্ট তাই একে হাজার দুয়ারী নামকরণ করা হয়ে থাকে বাইরে থেকে এবং ভিতর থেকে হাজারদুয়ারিতে অনেক দরজা দৃশ্যমান হলেও এর মধ্যে অনেক দরজায় আদবে নকল দূর থেকে মনে হবে আসল চমক শুধু দরজায় নয় ঘরগুলো মন মুগ্ধকর আসলে এই প্রাসাদে আসল নকল মিলে এক হাজার দরজা আছে তাই এর নাম হাজারদুয়ারি সাধারণ জনগণের ধারণা এই প্রাসাদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা নির্মাণ করেছিলেন কিন্তু সিরাজের নিজস্ব প্রাসাদ ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত যার নাম হিরাঝিল এটা অনেক আগেই ভাগীরথীর ভাগনে বিলীন হয়ে যায় সিরাজের মৃত্যুর আশি বছর পর নবাব হুমায়ুন যা নামের এক সৌখিন নবাব। হাজারদুয়ারি প্যালেস নির্মাণ করেছিলেন ভাগীরথীর পূর্ব তীরে হুমায়ুন যা ছিলেন প্রতিষ্ঠিত নবাবীর অষ্টম উত্তরাধিকারী এবং বংশধর হিসেবে পঞ্চম স্থপতি ডানকান মেকেলিওদের পরিকল্পনায় ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের ঘাচে প্রায় নয় বছর সময় এই প্রাসাদ নির্মাণ হয় হাজার দরজার এই প্রাসাদের ৯০০টা দরজা সত্যিকারের।
বাকি ১০০টা শত্রুর চোখে ঝিলমিল লাগানোর জন্য। অর্থাৎ ধাঁধায় ফেলে দেওয়ার জন্য। এক এক তলায় অস্ত্রাগার গ্যালারিতে প্রায় 2600 টি অস্ত্র সজ্জিত আছে তার মধ্যে এমন অস্ত্র রয়েছে যা পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়াও আলীবর্দী খানের ব্যবহার করা তলোয়ার বহু নল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদির শাহ র শিরস্ত্রাণ, মিরকাশিমের ছোরা, বিভিন্ন ধরনের কামান এখানকার মিউজিয়মে রাখা আছে। বিভিন্ন ধরনের কামান ও ছড়া এমনকি যে ছড়া দিয়ে সিরাজদৌল্লা কে হত্যা করা হয়েছিল সেটি ওই গ্যালারিতে আছে দোতলার বিভিন্ন আর্ট গ্যালারিতে, মুর্শিদকুলি খায়ের মার্বেল পাথরের সিংহাসন আছে। আছে সিরাজউদ্দৌলার রুপোর পালকি পানপাত্র চিনামাটির বিভিন্ন রকমের ফুলদানি। হাতির দাঁতের সোফা সেট নবাবদের ব্যবহার করা বিলিয়ার্ড ম্যাজিক আয়না মমি করে রাখা দুষ্প্রাপ্য সব পাখি দরবার কক্ষে রয়েছে ভিক্টোরিয়ার উপহার দেওয়া ১০১ টি বাতিল সুদৃশ্য ঝাড়বাতি হারুন আল রশিদের সহাস্তে লিখিত 10 ইঞ্চি লম্বা এবং ৬ ইঞ্চি চওড়া ৩১ পাতার কোরান এবং আবুল ফজরের আইন ই আকবরির পান্ডুলিপি।
একেবারে চোখ ধাঁধানো ইতিহাস ছুঁয়ে যাবে আপনার হৃদয়। দরবার কক্ষে রয়েছে ভিক্টোরিয়ার উপহার দেওয়া ১৩১ টি বাতির সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। এখানে ক্যামেরা বা মোবাইল দিয়ে ঢোকা নিষেধ রয়েছে হলে তো অন্দরমহলের কোন ছবি আপনি তুলতে পারবেন না। টিকিট কেটে হাজারদুয়ারি প্রাসাদে ঢোকার মুখেই ক্যামেরা মোবাইল সব কিছু আপনাকে রেখে যেতে হবে। আপনার আসল ক্যামেরা আপনার চোখ। হৃদয়ের মণিকোঠায় থেকে যাবে সেই ছবি। প্রাসাদের ভিতরে ঢোকার মুখেই রাখা আছে একটি কামান যে কামানের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতি। হাজারদুয়ারির ঠিক বিপরীতেই ভারতের সবচেয়ে বড় ইমামবাড়াটি অবস্থিত। মহরমের এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এই ইমামবাড়াতে দেখতে আসেন। মহরম মাসের শেষ থেকে অর্থাৎ শেষ দিন সকাল বেলা এখান থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। ইমামবাড়া ও হাজারদুয়ারির মাঝে রয়েছে মদিনামসজিদ। আকার একেবারেই ছোট। আসলে এটি মসজিদের আকৃতি বিশিষ্ট একটি ছোট্ট ভবন। নবাব সিরাজ নিজেই এই মদিনার জন্য কারবালা থেকে পবিত্র মাটি নিয়ে এসেছিলেন মায়ের প্রতিজ্ঞা পালনে এটি করেছিলেন বলে শোনা যায়।রয়েছে বাচ্চা ওয়ালি কামান। হাজারদুয়ারি প্রাসাদের উত্তর দিকে মদিনার ঠিক পাশেই রয়েছে এই কামান ১৭৪৭ সালের ঢাকার বিখ্যাত কর্মকার জনার্দন এটি তৈরি করেন। ঘুরতে ঘুরতে প্রত্যক্ষ করবেন এরকম সব ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করবে না। ঘুরে আসুন মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি।