লক্ষ্য দূষণমুক্ত পরিবেশ! সমুদ্রের জল থেকে তৈরি হবে হাইড্রোজেন, উদ্যোগী বাঙালি বিজ্ঞানীদের দল
Bengali Scientists experiment on ocean water for hydrogen

The Truth of Bengal, Mou Basu: বাঙালির বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মুকুটে নয়া পালক যোগ হতে চলেছে। সমুদ্রের জল থেকে বিজ্ঞানীরা হাইড্রোজেন তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আইআইটি মাদ্রাজের ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েক জন বিটেক, পিএইচডি পড়ুয়া ও গবেষক মিলে এই গবেষণা চালাচ্ছেন। এই গবেষণায় আইআইটি মাদ্রাজের ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে সাহায্য করেছে Virya Paramita Energy Pvt.Ltd, এলাহাবাদের এমএনএনআইটি, সুপারভ্যু এআই আর হাওড়ার এমসিকেভি ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠান। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম উপকূলে “সিন্ধুজা-১” নামে ওয়েভ এনার্জি যন্ত্রের সফল পরীক্ষা করা হয়েছে। সফল পরীক্ষাটি হয়েছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। উদ্ভাবনী শক্তিতে এর আগেও তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রের ঢেউ থেকেই কনভার্টারের সাহায্যে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। সে জন্য বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন অত্যাধুনিক ‘ওশেন ওয়েভ এনার্জি কনভার্টার’ (Ocean Wave Energy Converter)। বিশাখাপত্তনমের আগে তামিলনাডুর তুতিকোরিন উপকূলে থোত্থুকোডিতে সমুদ্রের ২০ মিটার গভীরে ঢেউয়ে সফল ভাবে কনভার্টারের পরীক্ষা করা হয়। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন আইআইটি মাদ্রাজের অধ্যাপক আব্দুস সামাদ। অধ্যাপক সামাদ ছাড়া এই দলে আরো ৩ জন বাঙালি বিজ্ঞানী রয়েছেন। তাঁরা হলেন এলাহাবাদ এমএনএনআইটির অধ্যাপক অক্ষয়রঞ্জন পাল, আইআইটি মাদ্রাজের অধ্যাপক অভিজিৎ চৌধুরী ও এমসিকেভি ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সোহরাব হোসেন। অধ্যাপক আব্দুস সামাদের জন্ম বীরভূম জেলার সেকাড্ডা গ্রামে। অধ্যাপক অভিজিৎ চৌধুরীর জন্ম বীরভূমের মল্লারপুরে, দুর্গাপুরে জন্ম অধ্যাপক অক্ষয়রঞ্জন পালের। অধ্যাপক সোহরাব হোসেনের জন্ম মুর্শিদাবাদের ডোমকলে।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশাখাপত্তনম উপকূল থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে “সিন্ধুজা-১” নামে Ocean wave based sea surveillance system ও energy based hydrogen generation যন্ত্রের সফল পরীক্ষা করা হয়েছে। অধ্যাপক আব্দুস সামাদ জানান, সমুদ্রের ঢেউ থেকে শক্তি বের করে নিয়ে তা unmanned surveillance system এর মধ্যে চালান করবে সিন্ধুজা-১। এতে একদিকে যেমন ব্যাটারির ওপর নির্ভরতা কমবে, খরচ বাঁচবে তেমনই কমবে সমুদ্রের দূষণ যা এখন সবার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও সিন্ধুজা-১ নামক যন্ত্রটি ইলেকট্রোলাইজারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ (ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি) থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করতে পারে। সমুদ্রের জলে ভেসে থাকবে এই সিন্ধুজা-১ নামক যন্ত্রটি। ১৫ মিটার থেকে সমুদ্রের যে কোনো গভীরতায় মোতায়েন করা যাবে এই যন্ত্র।” সমুদ্রের জলে সিন্ধুজা-১ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন আইআইটি মাদ্রাজের ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সামাদ ও Virya Paramita Energy Pvt. Ltd. এর সাই কার্তিক। গবেষক দলের বাকি সদস্যরা হলেন, সুনকারা ভাস্কর রাও, আত্মানন্দ এম এ, প্রশান্ত কুমার, জিজ্ঞাসু ভার্মা, অতুল কুমার পাণ্ডে, শতাব্দ চৌধুরী, সুমেধ রবীন্দ্র, শৈলেশ কুমার, এস রাজা কোনাথালা, তেজা কোনাথালা, কল্যাণ, দেবেশ সুমন কুমার। এলাহাবাদের এমএনএনআইটি ও হাওড়ার এমসিকেভি ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রের নকশা আর সমুদ্রে মোতায়েন করতে সাহায্য করেছে।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য সমুদ্রের ঢেউয়ের শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত করা। এভাবে বিকল্প দূষণমুক্ত শক্তি তৈরি করা ও তাতে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। দ্বিতীয়ত, উৎপন্ন হওয়া বিদ্যুৎ শক্তির মাধ্যমে সমুদ্রের ঢেউ ও জল থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করা। surveillance system এ ক্যামেরা লাগানো থাকবে। সেই ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ আসবে সমুদ্রের জল থেকে। এই ক্যামেরা নজর রাখবে সমুদ্রের ওপর নৌ চলাচলের ওপর ও সমুদ্রে কেউ ডুবে যাচ্ছেন না তো, কেউ বিপদে পড়ছেন না তো সেদিকে। প্রচুর পরিমাণে তথ্য বা ডেটা স্টোর করে রাখার জন্য ক্যামেরায় আলাদা যন্ত্র লাগানো আছে। প্রযুক্তির সাহায্যে এই ডেটা আলাদা জায়গায় বসেও পাওয়া যাবে খুব সহজে। এই গবেষণার লক্ষ্য হল সৌর শক্তির পাশাপাশি সমুদ্রের জল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎকেও বিকল্প দূষণমুক্ত শক্তি হিসেবে তুলে ধরা। আমাদের আরো উদ্দেশ্য জিরো কার্বন নিঃসারণ ও গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহার। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাজ পাওয়ার কোয়ালিটি ঠিকঠাক আছে কিনা, শক্তি সঞ্চয় ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, এসব দেখা।’
সমুদ্রের ঢেউ নিয়ে কাজ বলে কনভার্টারের নাম গবেষকরা দিয়েছেন ‘সিন্ধুজা-১’। কনভার্টারের অংশ হিসেবে থাকবে একটা ভেসে থাকা বয়া, একটি স্পার ও একটি বৈদ্যুতিক মডিউল। ঢেউয়ের ওপর-নীচের সঙ্গে বয়াও ওপরের নীচ করবে। বয়ার মধ্যে একটা ছিদ্র থাকবে, তার মধ্যে দিয়ে একটা লম্বা রড ঢোকানো হবে। রডটি স্পার হিসেবে কাজ করবে। রডটি প্রয়োজনে সমুদ্রের তলায় (sea bed) পুঁতে দেওয়া যাবে।
কীভাবে কাজ করবে ওসেন ওয়েভ এনার্জি কনভার্টার?
ঢেউয়ের তালে যখন কনভার্টার ওপর নীচ করবে তখন রিলেটিভ মোশন তৈরি হবে। এতে ইলেকট্রিক জেনারেটর চালু হবে তাতে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। একটি চেন দিয়ে আটকানো থাকবে গোটা সিস্টেম। সিন্ধুজা নামে ওসেন ওয়েভ এনার্জি কনভার্টার তৈরি করার পুরো প্রক্রিয়া আইআইটি মাদ্রাজের ওসেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক আব্দুস সামাদের মস্তিষ্কপ্রসূত। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বায়ুদূষণ কমাতে কার্বন নিঃসারণ একেবারে শূন্যে নামিয়ে এনে সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ কীভাবে তৈরি করা যায় তা নিয়ে কাজ করছেন। গবেষক দলের লক্ষ্য হল আগামী ৩ বছরের মধ্যে ওসেন ওয়েভ এনার্জি কনভার্টারের মাধ্যমে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করা। এখন সিন্ধুজা নামে কনভার্টারের সাহায্যে ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব।