
যুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় (বিসিসিআই কোচ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার): অনেক বিখ্যাত তারকাদের খারাপ প্রদর্শন সত্ত্বেও এবারের আইপিএল স্মরণীয় হয়ে থাকবে বেশ কজন নতুন প্রতিভার চোখ ধাঁধান আত্মপ্রকাশের কারণে। প্রথমেই আলোচনায় আসবে দুটি অনূর্ধ্ব উনিশএর প্রতিভার নাম- যারা ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডগামী অনূর্ধ্ব উনিশ ভারত দলে জায়গা করে নিয়েছে মূলতঃ তাদের আইপিএল-এ নজরকাড়া প্রদর্শনের জন্যে। চৌদ্দ বছরের বৈভব গুজরাটের বিরুদ্ধে শুধু মাত্র ৩৫ বলে শুধু ১০০ করে নি, সেইসঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে টুর্নামেন্টের দ্রুততম রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় সবার ওপরে। মাত্র ৭ ম্যাচে একটি করে ১০০ এবং ৫০-সহ ২৫২ রান করেছে ২০৬.৫৫ স্ট্রাইক রেট নিয়ে যা সর্বোচ্চ। বাকি সব মারকাটারি ব্যাটসম্যানরা সরে গিয়েছে এই বিস্ময় বালকের ব্যাটের ঝড়ের সামনে, ভাবা যায়?
দ্রুততমদের তালিকার শীর্ষ পাঁচ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আরেক বিস্ময় বালক মুম্বই থেকে উঠে আসা এবং ধোনির চেন্নাইয়ের হয়ে এবারে প্রথম আইপিএল খেলতে নামা আয়ুস মাত্রে। সে ১৮৯ স্ট্রাইকরেটে ৭ ম্যাচে ২৪০ রান করেছে ১টি ৫০ সহ। ভারতের অগণিত ক্রিকেট প্রেমিকের আশা যে এরা দুজনই হয়তো একদিন ‘রো-কো’ জুটির শূন্যস্থান পূরণ করবে।
এরপরে নাম করব মাত্র ২০ বছরের এক তরুণ অলরাউন্ডআর ভিপ্রাজ নাইগম-এর। আগের দুজনের রাজস্থান এবং চেন্নাই এর মত ভিপ্রাজের দল দিল্লিও পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি, কিন্তু মুলত ভিপ্রাজের দারুণ লেগ স্পিনের জন্যে দিল্লি শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের আগ্রাসী ব্যাটিংকে আটকাতে সক্ষম হয়, এবং ম্যাচ জিততে পারে। এবারের আইপিএল- এ ২০-র ওপর গড়ে ১৮০-র কাছাকাছি দারুণ স্ট্রাইক রেটে ১৪২ রান এবং পাশাপাশি ১১টি উইকেট নেবার সুবাদে আইপিএল-র সবচেয়ে মূল্যবান ১৫ জন খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে সে।
ওই ১৫ জনের আরেকজন যিনি প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি হলেন পাঞ্জাবের প্রিয়াংশ আর্য। ঘরের মাঠে চেন্নাই এর বিরুদ্ধে দল যখন ৮৭/৬-এ প্রায় বিপর্যস্ত, তখন ম্যাচ জেতান ১০০ রান করে। যাতে সবার নজর পরেন এই পঞ্জাব ব্যাটার। ১৪টি ম্যাচে ৩০ -এর ওপর গড়ে ১৮৪-র দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেটে ৪২৪ রান করে ছেলেটি পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাবার অন্যতম দাবিদার।
লেখা শেষ করব এমন আরেকজন তরুণ তুর্কির কথা বলে যিনি আসলে তুর্কি নন, ওপরের চার জনের মতো ভারতীয়ও নন। তিনি জন্মসূত্রে আফগান এবং বোলিং শৈলীতে চায়নাম্যান! লিগ পর্যায়ে এবারের সর্বোচ্চ উইকেট (২৫) শিকারী নূর আহমদ-এর দুরন্ত বাম হাতি স্পিনের জাদুতে অনেক বড় দলের বড় ব্যাটাররা পরাস্ত হয়েছেন। চেন্নাই সবার শেষে থাকলেও, সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়দের মধ্যে সপ্তম স্থানে উজ্জ্বল নূর।
এবারের আইপিএল-এ সবচে প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড় (অনূর্ধ্ব পঁচিশ বছর বয়সের ইমার্জিং প্লেয়ার) কে হবেন এখনও জানা না গেলেও নূরের দল প্লেঅফে যেতে না পারার ফলে সে প্রিয়অংশ বা সাইদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে ঠিকই। এইসব প্রতিশ্রুতিমানদের ভিড়ে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের বাংলার অভিষেক পোড়েল, কেকেআর-এর হর্ষিত ও রঘুবংশীরাও। আশা রাখা যাক, এরা একদিন ভারতের (এবং নিজের দেশের) জার্সি গায়ে তুলবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন দিনের নতুন ভোরে। আইপিএল এর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তো এরাই।