যুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় (বিসিসিআই কোচ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার): ২০০৮, ২০১৩, ২০১৯ এবং ২০২১ এই চার বছরে চেন্নাই কলকাতার বিরুদ্ধে হোম এবং অ্যাওয়ে দুটি খেলাতে, কখনও বা প্লেঅফ/ ফাইনাল ধরে ৩টিতেই জিতেছে। এবারে চেন্নাই থেকে কলকাতায় আসা রাহানের কাছে সুবর্ণ সুযোগ এই একপেশে পরিসংখ্যানটিতে কিছুটা ভারসাম্য আনার। তার জন্যে ঘরের মাঠে চেন্নাইকে হারাতেই হবে এবং সেইসঙ্গে প্লেঅফে জায়গা করে নেওয়ার দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে হবে। হায়দরাবাদ বৃষ্টির জন্যে প্রায় জেতা ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়ে ছিটকে গিয়েছে, তাই ৪টি জায়গার লড়াই এখন ৭ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন।
আপাতত ৩১টি খেলায় মুখোমুখি হয়েছে চেন্নাই এবং কলকাতা। যার মধ্যে ১৯টি জিতে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে অনেক এগিয়ে চেন্নাই। কিন্তু সাম্প্রতিক বিচারে ২০২১-র ফাইনালে হারের পর থেকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে কিন্তু কলকাতাই। চলতি বছরে চেন্নাইয়ের দূর্গ খোদ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে ধোনি বাহিনীকে প্রায় ১০ ওভার বাকি থাকতে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে রাহানের দল। গত এক বছরের দলগত জয়ের শতাংশের নিরিখেও এগিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কলকাতা ৭০ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে, আর চেন্নাইয়ের জয় ৫০ শতাংশেরও কম।
এর ওপর রাসেল, রিঙ্কুরা ফর্মে ফিরেছেন। স্পিনাররাও ধারাবাহিক ভাল বল করছেন। নতুন বলে বৈভব, হর্ষিতরা আগুন ঝরাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেগুনি, সোনালি জার্সিকে অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে উল্টোদিকের হলুদ জার্সির থেকে।
আসলে চেন্নাইয়ের যেন কিছুই ঠিকঠাক চলেনি চলতি আইপিএল-এ। পরপর হার, চোট পেয়ে স্বয়ং অধিনায়ক ঋতুরাজের ছিটকে যাওয়া থেকেই তাদের সমস্যা শুরু। কিন্তু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আসল সমস্যা অনেক গভীরে। সব দলের মধ্যে চেন্নাইয়ের গড় পাওয়ার প্লেতে রান সর্বনিম্ন (৮-এরও) কম। এমনকি ১১টি ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৮টি ছয় মারতে পেরেছে তারা। সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ধরণের সাবধানী ও সাবেকপন্থী ব্যাটিং প্রথম থেকেই দলকে পিছিয়ে দিতে বাধ্য।
বোলিংয়ের নূর, খালিল সাধ্যমত চেষ্টা করলেও ব্যাটিংয়ে চেন্নাই-র বাহুবলীরা একেবারেই নিষপ্রভ। দুবে রাচীন, জাদেজা, ধোনি এই চার মহারথী সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ ইনিংসে মাত্র ৪টি অর্ধশত রান করতে পেরেছেন ওভার প্রতি ৮ রানেরও কম গতিতে। 55 কোটির বিশাল অর্থ থাকা সত্ত্বেও এবারের মেগা নিলামে সিএসকে পরিচালকদের নেওয়া সব সিদ্ধান্তই যেন ভুল প্রমাণিত হয়েছে। অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে দলে নেওয়া অশ্বিন, শংকর, ত্রিপাঠি, হুড, কনওয়েরা একযোগে ব্যর্থ হওয়ায় চেন্নাইয়ের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয় নি।
প্রসঙ্গত, এই নিয়ে গত ৬ বছরে ৪ বার চেন্নাই প্লে অফে উঠতে পারল না । কিন্তু কট্টর চেন্নাই সমর্থকরা বলবেন তাতে কি হয়েছে, এর মধ্যে দু-দুবার ২০২১ এবং ২০২৩-এ চ্যাম্পিয়নও তো হয়েছে চেন্নাই। যা আর কোনও দল পারেনি! আর বারবার হারের হতাশা ভুলে ‘থালা’ কে দেখতে এসেছেন অসংখ্য দর্শক। যাঁদের কাছে হারজিত নয়, ধোনির একটা ঝলকই যথেষ্ট।
অতএব এটাই দেখার যে পরের বছর আবার অভিজ্ঞতাকে ভরসা করে অনেক যুদ্ধের পোড় খাওয়া মহাধিনায়ক ধোনিকে সামনে রেখেই দল সাজানো হবে, নাকি নবরূপে নবীন যোদ্ধাদের নিয়ে ফিরে আসবে ৫ বছরের চ্যাম্পিয়নরা। তরুণ উইকেট রক্ষক উর্ভিল প্যাটেলকে শেষ মুহূর্তে দলে নিয়ে আসাটা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় নবীনবরণের সংকেত বলেই মনে হল। আপাতত কালকের খেলায় ফেভারিট কিন্তু কলকাতা! যদিও এটাও মনে রাখা দরকার যে ধোনি আছেন যতক্ষণ। ততক্ষণ কোনও কিছুই বলা যায় না। তাই এটাই আশা করা যাক যে বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে পুরো খেলা হবে, এবং দর্শকঠাসা ইডেনে চলতি বছরের শেষ হোম ম্যাচে মাহির মার সত্ত্বেও কেকেআর জিতবে।