IPL 2025খেলা

পিচের ‘জুজু’ দেখিয়ে আর কদিন চলবে?

How long will you continue to show off your 'pitch'?

যুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় (বিসিসিআই কোচ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার): টস এর সময়ে অধিনায়ক রাহানে বললেন, পিচ একটু শুকনো মনে হচ্ছে। তাহলে টস জিতে ব্যাটিং নয় কেনো? আর যদি ফিল্ডিং-ই নেন তাহলে ইডেনের হাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত সতেজ পিচ-এ  কোনও ভাল মিডিয়াম পেসার খেলানো হল না কেনো? বিশেষত যখন আমরা জানি যে গুজরাট অধিনায়ক এবং স্টার ওপেনিং ব্যাটার শুভমন গিলের একটু দুর্বলতা আছে ভাল ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে? এবং এটা জেনেও যে নাইটদের জন্যে এই ‘মারো নয়তো মর’ ম্যাচে শুরুতেই গুজরাটের বিধ্বংসী জুটিকে সরাতে না পারলে তারা খেলা থেকে কেকেআরকে একেবারেই সরিয়ে দিতে পারে? খেলা শুরু হওয়ার আগেই এইসব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে সাধারণ ক্রিকেট দর্শকদের মধ্যে। তারপর খেলা শুরু হয়ে যেতে এত আরও প্রশ্ন উঠতে থাকে কেকেআর-এর খেলা অর্থাৎ বোলিং কৌশল, রাহানের দল পরিচালনা ইত্যাদি নিয়ে যে আগেরগুলো একেবারেই চাপা পড়ে যায়!

অথচ কেকেআর শুরুটা খারাপ করেনি। পাওয়ার প্লেতে মোটামোটি কম রানে ৪৫/০ আটকে রেখেছিল রাহানের দল (প্রসঙ্গত কেকেআর ও ৪৫ রানই করেছিল নিজেদের পাওয়ার প্লেতে। অর্থাৎ সমানে সমানে ছিল তখনও) কিন্তু সপ্তম ওভারে সেই যে গিল মঈন আলির ওভারে ১৭ রান নিলেন, ব্যস আর ফিরে তাকাতে হয়নি গুজরাট কে। এখানেই অর্থাৎ মাঝের এই ৭ থেকে ১৫ ওভারেরপর্যায়ে কিন্তু পার্থক্য গড়ে দেন গুজরাটের ব্যাটাররা। ওই পর্যায়ে নাইটরা করেছে ৬২/২- ১০ বা তার বেশি রানের ওভার মাত্র ২! আর ওই মাঝের ৯ ওভারে গুজরাটের রান ৯৪/১- ১০ রান বা তার বেশি রানের ওভার ৫টি! যখন রান তাড়া করতে গিয়ে অবস্থা খারাপ তখন কেন রাসেলকে একটু আগে নামানো হলো না সেটাও পরিষ্কার নয়।

এই প্রসঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে রাসেলকে একেবারেই ভালভাবে ব্যবহার করছে না এবারের কলকাতা নাইট রাইডার্স টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের প্রথমার্ধে গুজরাটের ইনিংসে বিপজ্জনক সাই – গিল জুটি ১২ ওভার অবধি খেলে ১১৩ রান করার পরে তাঁকে আনা হল, সে সাইকে আউট করে দিল এবং ভাগ্য সহায় হলে হয়তো সেই ওভারেই বাটলারকেও আউট করে দিত। কিন্তু উল্টে তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা হল না। নাইট ইনিংসেও তাই হল, পাওয়ার প্লেতে কম রান হওয়া সত্ত্বেও রাসেলকে এগিয়ে আনা হল না।

সে যখন নামল তখন আস্কিং রান রেন রেট ১৫ ছুঁয়েছে। এমতাবস্থায় প্রথম তিন বলে একটি চার এবং একটি ছয় মেরে যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো তাঁকে এত পরে নামানো কত বড় ভুল! ১০ রান প্রতি ওভারে করতে হবে এই অবস্থায় রাহানে এবং রাসেল ছাড়া কারুর বল প্রতি রান সংখ্যা অর্থাৎ স্ট্রাইক রেট বলার মত নয়। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত যোগ হয়েছে কেকেআর-এর বামপন্থী অর্থাৎ বামহাতি ব্যাটার আইয়ার, রিঙ্কু, নারীন – ডিককদের খারাপ ফর্ম! এরপর নাইটরা ঘুরে দাঁড়াবে এমনটা হয়তো স্বয়ং শাহরুখও ভাবছেন না!

তবে এটাও দেখতে হবে যে গুজরাট এখন ১ নম্বর দল। আইপিএল ২০২৫-এর টপ টেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারদের মধ্যে ৪ জনই গুজরাটের। সাই, প্রসিদ্ধ, সিরাজ। বাটলার সমন্বিত গিলের নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধ গুজরাটকে হারানো সত্যিই হয়তো অসম্ভব ছিল তালিকার একদম শেষদিকে থাকা কেকেআর-এর পক্ষে। তবুও, মনে হয় এধরণের ভুল, ত্রুটিগুলি না করলে হয়তো আরও লড়াই হতে পারতো, খেলা বের ও করে নিতে পারতো রাহানের দল। আসলে অজুহাত এর আড়ালে থাকলে নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়ার সময়ে থাকে না। তাই যতো জলদি সেদিকে নজর না দেওয়া হবে, তত আইপিএল ২০২৫-এর কোয়ালিফিকেশন স্পট থেকে দূরে সরতে থাকবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি।

Related Articles