
The Truth of Bengal: কেরল বরাবরই কংগ্রেস বা বামেদের হাতে থেকেছে। ৫বছর অন্তর পরিবর্তনই ট্রাডিশন এই রাজ্যে। রাজনৈতিক পালাবদলে হাওয়া তুলতে পারেনি মোদি–শাহরা। কাজ করেনি মোদি ম্যাজিক। জাতীয়তাবাদ বা ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের কৌশল কাজে লাগানোর প্রয়াস বারবার ধাক্কা খেয়েছে। তথ্য বলছে, কেরলে, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ২০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস-জোট পেয়েছিল ১৯টি, বামজোট পায় ১টি আসন। উনিশে কংগ্রেস-জোট পায় ৪৭ শতাংশ, ভোট, বাম জোট পায় ৩৬ শতাংশ, বিজেপির দখলে থাকে ১৬ শতাংশ ভোট। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে উপকূল অধ্যুষিত রাজ্যে কংগ্রেস-জোট ৩৯ শতাংশ,এবং বাম-জোট ৪৩ শতাংশ ভোট পায়। চেষ্টা করেও বিজেপি বিধানসভায় খাতা খুলতে পারেনি। বামেরা পেয়েছিল ৯৯টি আসন আর কংগ্রেস-জোট পায় ৪১টি আসন। বিগত দশকের চেয়ে তাদের ভোটের হার সামান্য বেড়েছে। কিন্তু আজও এই রাজ্য থেকে লোকসভায় বিজেপি কোনো সাংসদ জিততে পারেনি।
প্রশ্ন ওঠে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি কেন কেরালায় মুখ থুবড়ে পড়ছে? পরিসংখ্যান বলছে, কেরলে ৪৫ ভাগ জনসংখ্যা অ-হিন্দু। সেই অঙ্কেই হিসেব মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছে গেরুয়া শিবির। মালায়াম প্রভাবিত কেরলে হিন্দু প্রায় ৫৫ ভাগ, ২৭ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও ১৮ ভাগ খ্রিষ্টান। যেহেতু রাজ্যে প্রায় ৪৫ ভাগ অ-হিন্দু মানুষ আছে, সে কারণে কেবল হিন্দুত্ববাদের ওপর ভর করে এখানে কোনো দলের নির্বাচনী সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। এখানকার হিন্দু বিশ্বাসীদের মধ্যে আবার কমিউনিস্ট পার্টির উল্লেখযোগ্য সাংগঠন রয়েছে। রাজ্যের হিন্দু সমাজে ‘ইঝাভাহ’ নামে পরিচিত তুলনামূলকভাবে নিম্নবর্ণের কৃষিজীবী গোষ্ঠীতে বামদলগুলোর রয়েছে দৃঢ়ভিত্তি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ানও একজন ইঝাভাহ। এই সম্প্রদায় হল রাজ্যের হিন্দুদের চার ভাগের এক ভাগ। এর মধ্যে কমিউনিস্টদের উপস্থিতি এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের বিজেপির প্রতি বিতৃষ্ণা বিজেপির পালে হাওয়া তুলতে দিচ্ছে না বলে পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণে বারবার ধরা পড়েছে।
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ, সিনাগগ ও চার্চ কেরলেই রয়েছে। এখানকার ভাসমান ভোটার ও পরিবর্তনকামী ভোটারের সংখ্যাই বেশি, যারজন্য ক্ষমতাসীন দলকে চাপে ফেলে। পারফরমেন্স দেখেই ভোটের হিসাব ওলট পালট হয়, ধর্মভিত্তিক উন্মাদনায় একেবারেই বিফলে যায়। কেরলের আরেকটি নির্বাচনী বিশেষত্ব হলো, এখানকার পৌনে তিন কোটি ভোটারের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার প্রায় নয় লাখ বেশি। এই নারীদের বড় এক অংশ শ্রমজীবী। এরাও স্থানীয় বামদলগুলোর বড় ভোটব্যাংক। প্রথমেই যা ধরা পড়ে, তা হলো সংখ্যালঘুদের জন্য দলটির কোনো ইতিবাচক রাজনীতি নেই। বিজেপি সংখ্যাগুরুর দল হয়ে পড়েছে—যা ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে বেশ বেমানান। এ কারণে বিজেপি উত্তর ভারতে প্রায় একচেটিয়া হয়ে উঠলেও দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটকের বাইরে তাঁদের শক্তি বিস্তার হয়নি সেভাবে। কেরলের মতো দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলোতে তার চূড়ান্ত নির্বাচনী সফলতার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতেও কম। তাই এখন দেখার বিষয় আগামী বছর ঘুরতেই লোকসভা ভোট ফল করে বিজেপি।
Free Access