
Truth Of Bengal : কম বয়সেই পড়াশোনার সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সংস্পর্শে আসেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে আরএসএস-এর প্রচারক হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সংঘের শাখা তৈরি করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি আন্দামানে কাটিয়েছিলেন আরএসএস-এর প্রচার করতে। সেখান থেকে আচমকাই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়া। নতুন ক্ষেত্রে একেবারে টি-২০ মেজাজে শুরু করেন নিজের ইনিংস। তিনি দিলীপ ঘোষ। বঙ্গ রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষ নামটি বিতর্কের সঙ্গে সমর্থক হয়ে গিয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তিনি বারবার খবরের শিরোনামে আসেন।
গরুর দুধে সোনা পাওয়া থেকে, পুলিশ-প্রশাসনকে হুমকি। আজব-উদ্ভট কথা বলে তিনি হাসির উদ্রেক সৃষ্টি করেন। আবার বিপক্ষ রাজনীতিবিদদের কুকথায় বারবার নিশানা করেন। এখানে শেষ নয়, মা দুর্গা সম্পর্কেও স্পর্শকাতর কথা বলতে পিছুপা হন না। এখন তিনি আবার খবরের শিরোনামে। এবার তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলতে শোনা গিয়েছে দিলীপকে। তাঁর পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভব্যতার সীমা ছাড়িয়েছেন। যা নিয়ে গোটা রাজ্যে নিন্দার ঝড় চলছে। দিল্লি থেকে তাঁর দল তাঁকে শো-কজ করেছে। নির্বাচন কমিশনও তাঁকে শো-কজ করেছে। থানায় এফআইআর-ও দায়ের হয়েছে। তাও চুপ নেই দিলীপ। এত চাপের পর যেখানে সংযত হওয়ার কথা, সেখানে আরও বেপরোয়া হয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘মেসোমশাই’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম ভোটে লড়াই করেছিলেন তিনি। খড়গপুর সদর বিধানসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস প্রার্থী জ্ঞান সিং সোহনপালকে হারিয়েছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে ২০১১ সাল সাতবার একটানা জয়ী হয়ে আসা খড়গপুর ‘চাচা’-কে হারিয়ে রাজনীতিতেসাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সেই শুরু। তারপর এগিয়ে চলা। পরে তিনি হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর আমলে এই রাজ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অভাবনীয় ফল করেছিল বিজেপি। তারপর দাপট বাড়তে থাকে দিলীপের। কু-কথার ফুলঝুরি চলতে থাকে তাঁর মুখে।
হঠাৎ ছন্দপতন। সরিয়ে দেওয়া রাজ্য সভাপতি পদ থেকে। এখন দলের অন্দরে কোণঠাসা দিলীপ। আগের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসন থেকে জিতেছিলেন দিলীপ। এবার তাঁকে সেই আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। জেতা আসন থেকে সরিয়ে তাঁকে এবার ‘বিপজ্জনক’ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যা তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দল থেকেও একাধিকার তাঁকে ‘সেন্সর’ করা হয়েছে। তাও কু-কথায় লাগামহীন-বেপরোয়া দিলীপ। আরএসএস করলেও তিনি দলের শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে চান না।
নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস রয়েছে দিলীপের। কখনও ইকো পার্কে কখনও বা খড়গপুরের কোনও মাঠে ব্যায়াম করতে দেখা যায় তাঁকে। তারপর টিভি চ্যানেলের বুমে নানা ‘বাক্যবান’। সব বিষয়ে মতামত পাওয়া যায় দিলীপের। এইভাবে তিনি তাঁর একটা নিজস্ব ‘ফ্যানবেস’ তৈরি করেছেন। একেবারে নিজস্ব একটা স্টাইল আছে দিলীপের। যা অনেকটা মেঠো স্টাইল। সেই দিলীপ ঘোষ বারবার যে কু-কথা বলেন, তা এই বাংলার সঙ্গে যায় যায় না। যা বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী। নিন্দার ঝড় ওঠে। বাঙালি অবাক হয় এই কালচার দেখে। তাতে কিছুই যায় আসে না দিলীপের। সভ্যতা-ভব্যতার মাপকাঠিতে তাঁকে আটকে রাখা যায় না। দিলীপ আছেন দিলীপেই।
FREE ACCESS