
The Truth of Bengal: স্বেচ্ছাচারিতা, একনায়কতন্ত্র ও গণতন্ত্রকে খুনের চেষ্টা– কেন্দ্রের ‘এক দেশ এক ভোট’ ভাবনাকে এই ভাষায় তোপ দেগেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ইস্যুতে ধর্নামঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কেন্দ্রের কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে তিনি দিল্লিতে যাবেন। সেখানে জানাবেন নিজের আপত্তির কথা। কেন্দ্র চায় ‘এক দেশ এক ভোট’। অর্থাৎ, একসঙ্গে হবে কেন্দ্র ও রাজ্যের ভোট। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হলে খরচ কমবে অনেকটাই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। একই খরচে দুটি ভোট সেরে নেওয়া যাবে। নির্বাচনী আচরণবিধি চালু থাকার জন্য থমকে থাকবে না উন্নয়ন। প্রশাসনিক দক্ষতা ও কার্যক্ষমতাও অনেকাংশে বাড়বে। এছাড়াও আরও অনেক কারণ তুলে ধরে যুক্তি সাজিয়েছে কেন্দ্র। বিষয়টি নির্ধারণ করতে ৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন হয়েছে। তার মাথায় আছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
কমিটিতে আছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ, অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনকে সিং, লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ সি কাশ্যপ, প্রাক্তন মুখ্য পর্যবেক্ষণ কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি এবং বিশিষ্ট আইনজীবী হরিশ সালভে। তবে এই কমিটি একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মত জানতে চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে কমিটির প্রথম বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সেখানে অবশ্য হাজির ছিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১২ জানুয়ারি ‘এক দেশ এক ভোট’ কর্মসূচিকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রীকে কড়া চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে লিখেছিলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, আর অখণ্ডতাই হল মূল ভিত্তি। দেশ এগিয়ে চলে কেন্দ্র-রাজ্যের সুসম্পর্কের মধ্যে দিয়ে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্যতম শর্ত।
এবার ৬ ফেব্রুয়ারি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে যোগ দিলেও কেন্দ্রের এক দেশ এক ভোট নীতি স্বেচ্ছাচারিতা, একনায়কতন্ত্র ও গণতন্ত্রকে খুনের চেষ্টা বলে তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে এই ইস্যুতে সরব হন তিনি। ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে কেন্দ্র যা যুক্তি দিক না কেন, বিরোধীরাও যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য তুলে ধরেছে। বিরোধী যুক্তি ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। জাতীয় স্তরের দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার বা খরচ করাও সম্ভব নয় আঞ্চলিক দলগুলির। জাতীয় স্তরের বড় দলগুলির সঙ্গে পেরে উঠবে না আঞ্চলিক দলগুলি। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রের যুক্তি মেনে সহত হয়েছে। তবে বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলি কেন্দ্রের এই ভাবনার মধ্যে স্বৈরাচারী শাসন দেখছে। তাই তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে তারা। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুর চড়াচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।