অফবিট

রঙ-এর উৎসব কেন এখন হ্যাপি হোলি?

Why is the festival of colors now Happy Holi?

Truth Of Bengal: দোলের সেকাল ও একাল—কথাটা বললেই কেমন যেন মনে হয় এটা সংঘাতের প্রশ্ন বা অবান্তর সোনার পাথরবাটির মতো কোনও ব্যাপার। আদৌ কিন্তু বিষয়টি প্রাচীন-নবীনের দ্বন্দ্ব নয়—বিষয়টি হল সময়কে সঙ্গী করে জীবনকে বেয়ে চলার যে সুমন্দ প্রক্রিয়া তাকে আমরা কতটা ধরে রেখেছি আর কতটাই বা বর্জন করেছি?

বাঙালির ১৩ পার্বণের অন্যতম হল “দোল”। আসমুদ্র হিমাচল যদি কোনও উৎসব ঘিরে মাতোয়ারা হয় তা হল রঙের উৎসব দোল বা হোলি। শীতের জড়ত্ব কাটিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে বসন্তকে আহ্বান জানাতে জীবনে একটি বিশেষ দিন তো রাখতেই হবে। সেই বিশেষ দিনটিই হল দোল। বঙ্গজীবনে দোল তো শুধু আবীর আর রঙে ভেজানো খেলা নয়, সেখানো রঙ থাকে বনে, রঙ থাকে মনে। কালে কালে সেটাই হয়ে আসছে। সেই রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার ঋজু অনিন্দ্যসুন্দর মুর্হূতগুলি আসলে দোল। শ্রদ্ধা, ভালবাসা রোম্যান্টিকতা নিয়ে দোল আসলে বাঙালি জীবনের সেই প্রাণবায়ু।

আক্ষরিক অর্থে দোল শব্দের অর্থ দোলন বা ইতস্ততঃ সঞ্চালন। পণ্ডিতদের মতে, প্রাচীন ভারতে মধু ঋতুর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেমন নবরূপে সজ্জিত হত, মানবজীবনও তেমন নতুনরূপে নতুন উদ্যমে শুরু করত আনন্দ, গান, নৃত্যের মাধ্যমে। এজন্য বসন্ত থেকেই আমাদের দেশে বর্ষারম্ভ হয়। আর ঠিক এই কারণেই দোলের প্রকৃত অর্থটি হয়ে দাঁড়াল দহন। পুরনো বছরের সব পাপ, তাপ, ক্ষয়, গ্লানি, বিদ্বেষ—যা কিছু অশুভ, অসুন্দর ঝরা পাতার মতো সব কিছুরই চিরবিদায়।

এজন্য দোলের আগের দিন সর্বত্র চাঁচর পোড়ানোর প্রথা আছে। আসলে এটি একটি প্রতীক। অশুভ শক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে শুভ শক্তির বিজয় ঘোষণা। সে হোলিকা রাক্ষসীকে দহন করে প্রহ্লাদ বা শুভ শক্তিকে জীবনে স্থান দেওয়া হোক বা ঋতু পরিবর্তনে প্রকৃতিতে উৎপন্ন হওয়া নানা রকম জীবাণুর নিধন। আসলে প্রকৃতিই এখানে প্রধান শিক্ষাদাত্রী। ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভের চেতনা তো প্রকৃতিই দেয়। আর মানুষ সমাজবদ্ধ জীব—তাই সকলকে নিয়ে তার আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার প্রবণতা। দোল বা হোলির সার্থকতা সেখানেই।

কেমন ছিল সেকালের বাংলার রঙিন দোলচিত্র?

পণ্ডিতদের মতে, ব্রজভূমি বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের অপার্থিব প্রেমলীলার অনুপম ধারা থেকেই বাংলায় দোল উৎসবের সূচনা। বাংলায় এর সার্থক প্রবর্তন ঘটিয়েছিলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য। যদিও আপামর বাঙালি এই পূর্ণ বিশুদ্ধ পথটি গ্রহণ করেছিলেন কিনা তা নিয়ে দ্বিমত আছে। সেকালের বৈষ্ণব সমাজ ও কয়েকজন সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালি তা মেনে চললেও সাধারণের কাছে মানবীয় প্রেমলীলার উৎসব বলে পরিচিত হয়েছিল। সেকালের ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যায়—একদিকে যেমন রঙ মেখে দলে দলে মিছিল বের হত। অশ্রাব্য গান আর কুৎসিত সঙ—চটুল বিনোদনই যার একমাত্র উপজীব্য। এর উল্টো চিত্রও আছে। আত্মগর্বী অভিজাত বাঙালি শুনলে খুশি হবেন—মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম হয়েও বাড়ির মেয়েদের নিয়ে দোল খেলতেন।

Related Articles