“রাজ্য পশু” বাঘরোল সংরক্ষণে উদ্যোগী রাজ্য সরকার
The State Government is committed to the conservation of Baghrol

The Truth of Bengal, Mou Basu: ভারতের জাতীয় পশু হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পশু বা স্টেট অ্যানিমাল কী? অনেকেই মাথা চুলকোবেন, উত্তর বলতে পারবেন না। উত্তরটি হল, বাঘরোল। হ্যাঁ, বাঘরোল বা ফিশিং ক্যাটই হল বাংলার স্টেট অ্যানিমাল। সেই রাজ্য পশু বা স্টেট অ্যানিমালকে বাঁচাতেই এবার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এক সময় গ্রামাঞ্চলে তো বটেই শহরেও মাঝেমধ্যে দেখা যেত বাঘরোলদের। কিন্তু আজ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে ফিশিং ক্যাট। আকারে সাধারণ বেড়ালের চেয়ে বড়ো হয়, গায়ে লেপার্ড বা চিতাবাঘের মতো ছোপছোপ থাকে বলে অনেকেই বাঘরোলকে চিতাবাঘের শাবকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। অনেক সময়ই ধরা পড়া বাঘরোলকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এসব কারণে দিন কে দিন বাঘরোলের সংখ্যা কমছে। এমন পরিস্থিতিতে হাওড়ার গড়চুমুক চিড়িয়াখানায় বাঘরোলদের বাঁচাতে, সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রজনন ঘটানোর বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বন দফতর। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজেই এব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন।
রাজ্য বন দফতর সূত্রে খবর, গড়চুমুক চিড়িয়াখানার পাশাপাশি বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের চিড়িয়াখানাতেও পরীক্ষামূলক ভাবে এমন কর্মসূচি চালানো হবে। রাজ্যের বন দফতরের লক্ষ্য হল, ২০২৪ সালের মধ্যে জঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘরোলদের ছাড়ার। ওয়েস্ট বেঙ্গল জ্যু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী জানান, আমাদের টার্গেট হল জঙ্গলে ৬-৮টি বাঘরোল ছাড়ার। বাঘরোল যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায় তার জন্য প্রজননের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে রাজ্য বন দফতর। বাঘরোল বা মাঝারি আকৃতির বন বেড়াল ভারতীয় উপমহাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। আর্দ্র পরিবেশে, জলাশয়ের কাছাকাছি বাস করে বাঘরোল। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল – Prionailurus viverrinus। বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন পশুর তালিকায় বাঘরোলকে রেখেছে International Union for Conservation of Nature (IUCN)।
জলবায়ু পরিবর্তন, চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম্য, জঙ্গল কেটে জনবসতি ও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা ও খাদ্যের অভাবের কারণেই আজ কমে গেছে বাঘরোলের সংখ্যা। তাই রাজ্যের বন দফতর উদ্যোগ নিয়েছে চিড়িয়াখানায় বাঘরোলের প্রজনন ঘটিয়ে তার সেই বাঘরোলদের জঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশে ছাড়ার। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কেও রাখা হবে কয়েকটি বাঘরোল। বাঘরোলদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে সুন্দরবনের ঝড়খালির পাশাপাশি হুগলি, হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া বাঘরোলদের কোথাকার জঙ্গলে কোন পরিবেশে ছাড়া হবে এনিয়ে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। বাঘরোলদের যে জঙ্গলে ছাড়া হবে সেখানকার আশপাশের বাসিন্দারা কতটা পরিবেশ সচেতন সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।