বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ- ‘চৈত্র সেল পার্বণ’
The fourteenth festival of Bengalis - 'Chaitra Sale Parvan'

Truth Of Bengal: ‘চৈত্র পবনে মম চিত্তবনে…’ সুবিনয় রায়ের জলদ স্নাত কণ্ঠের গানের কলি শুনতে শুনতে মনে হল রবি ঠাকুর কি একশো বছর আগেই জানতেন যে এই সময় বঙ্গজীবনের প্রতিটি ক্ষণ কত চঞ্চল, কত আবেগ, কত বিপণন বিপন্নতায় উদীপ্ত হবে অথবা সংকলিতা হবে এক তীব্র তাড়নায়-যার নাম ইংরেজি হলেও বাঙালির আট থেকে আশি সবার কাছেই খুব চেনা এক শব্দ – ‘সেল’।
রাজপথ থেকে অলিগলি -বাজার হাট থেকে শপিং মল, ছোট বুটিক থেকে ওজনদার বিখ্যাত ডিজাইনার কিংবা অনলাইন বিক্রেতা-সকলেই মহাসমারোহে টি টোয়েন্টি ম্যাচের মতো বঙ্গদেশে চৈত্র ঝড়ের হিন্দোল তুলে চতুর্দশ পার্বণকে যেন আরও একবার মহাপুজোর রিহার্সাল দিচ্ছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে বঙ্গজীবনের অঙ্গ হিসাবে এই চমৎকারী প্রবণতা।
মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু আর শেষ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গাব্দের শেষ দিনটি পর্যন্ত। সেলের সময়সীমা কমবেশি এইটুকুই। অথচ আধুনিক বঙ্গজীবনে কী তার সীমাহীন বিস্তার। খ্যাপা চৈত্র হাওয়া যেমন পলকে উড়িয়ে নিয়ে যায় পুরনো ঝরা পাতার স্তূপ নিয়ে আসে নতুন সম্ভাবনার কচি পাতার ঝলমলে সবুজায়ন-তেমনি চৈত্র সেলের পার্বণও এখন নিয়ে আসে ব্যবসা, বিপণন বা কেনাকাটার উদ্দীপনা। এসময় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের সারা বছরের আর্থিক লাভ হয়। সাবেক বাঙালি এখনো একে হুজুগ বলে চালালেও সংখ্যাধিক্যে তারাই বেশি যারা মনেপ্রাণে সেলকে ঠাঁই দিয়েছে আপন জীবনশৈলীতে।
এখন তর্কের বিষয় হল আধুনিক বঙ্গজীবনে সেল পার্বণ কতটা যুক্তিযুক্ত? কয়েক দশক আগে কি বাঙালি সুন্দর ভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতো না? নাকি আত্মঘাতী বাঙালির এও এক ফিউশন প্রবণতা। অন্য দেশ, অন্য সমাজ বা অন্য জাতির সংস্কৃতিকে স্থান, কাল, পাত্র ভেদ না করে বেমানান ভাবে গ্রহণ করা? কোনটা ঠিক আর বেঠিক, তার বিচার কে বা কারা করবে?
আরও কয়েক দশক পরে হয়তো বাঙালি এর উত্তর পাবে। তবে এখন এই চলমান সময় দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বলা যায় বাঙালির জীবনে ‘সেল পার্বণ’টি যথেষ্ট মজবুত ও গভীর জায়গা জুড়ে আছে। জীবন রসিক,খাদ্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা ও আড়ম্বরপ্রিয় বাঙালি নিজ ঔদার্যে সবটুকু দিয়ে একে আপন করে নিয়েছে।