
The Truth of Bengal: অতি সম্প্রতি ভারতের চন্দ্রযান ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সফল অবতরণ করেছে। ইসরোর তরফে পাঠানো হয়েছে, চন্দ্রযান ৩। বিক্রমের সফ্টল্যান্ডিং থেকে প্রজ্ঞানের চাঁদের মাটিতে বিচরণ গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যদিও মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস শুরু হয়েছিল, ইউএসএসআরের বা সোভিয়েত রাশিয়ার হাত ধরে। একাধিকবার মহাকাশে পাঠানো হয় যান। কিন্তু একবার ঘটেছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা।২৪ এপ্রিল ১৯৬৭ রাশিয়ার মহাকাশচারী ভ্লাদিমির মিখাইলোভিচ কোমারভ,Vladimir Mikhaylovich Komarov একটি স্পেস ক্যাপসুলে চড়ে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ফিরছিলেন। স্পেস ক্যাপসুলের গতিবেগ ছিল ১৪৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। অত্যধিক গতিবেগ ও উচ্চঘর্ষণের কারণে স্পেস ক্যাপসুল পরিণত হল একটি অগ্নিপিণ্ডে। বাইরে আগুন লাগার ফলে ক্যাপসুলের ভিতরের তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করে। এই সময় তিনি ক্যাপসুলের মধ্যে চেঁচাতে থাকেন। বার্তা পাঠাতে থাকেন এই বলে, হিট ইজ রাইজিং ইন দ্যা ক্যাপসুল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর স্পেস ক্যাপসুলে বিস্ফোরণ ঘটে।সেই অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হওয়া ক্যাপসুল অবশেষ আছড়ে পড়ে পৃথিবীতে। পরে সেই ক্যাপসুল উদ্ধার করে গোয়েন্দারা। ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকা থেকে মেলে, একটি দলা পাকানো কালো মাটির তাল। সেটি ছিল জীবন্ত দ্বগ্ধ হয়ে যাওয়া কোমারভের দেহাবশেষ।
তবে কাহিনি এখানেই শেষ নয়, কোমারভ যে মারা যাবেন এটা তিনি নিজেও জানতেন। পাশাপাশি জানতেন তাঁর সহকর্মীরাও। তাহলে বাস্তব কাহিনির মোড় কোথায়?কোমারভ ছিলেন, একজন টেস্ট পাইলট, কস্মোনট এবং এয়রো ইঞ্জিনিয়র। যদিও তাঁর ছোটবেলা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যখন স্কুলে পড়তেন, তাঁকে আর্থিক অনটনের জন্য ঠিকাশ্রমের কাজও করতে হয়। তিনি আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে মেধাবিও ছিলেন। একটা সময় আসে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি, সোভিয়েত এয়ারফোর্সে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। কর্ম ও সাধনা এই দুটিকে হাতিয়ার করে কোমারভ একজন কসমোনট হয়ে ওঠেন। সময়টা ১৯৫৯, যোগ দিলেন সোভিয়েত স্পেস এজেন্সির অন্যতম কসমোনট হিসেবে। বলা বাহুল্য জনপ্রিয়ও হয়ে উঠলেন তিনি। যদিও তিনি মহাকাশচারী হিসেবে ততটা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেননি। সেই সময় আমেরিকার সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠান্ডাযুদ্ধ চলচে। সোভিয়েতের নেতারাও প্রাণপণে প্রমাণ করতে চাইছিল নিজেদের সুপার পাওয়ার দেখাতে। আর এর জন্য প্রয়োজন মহাকাশে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন।সোভিয়েত প্রথমবার সয়ুজ ১ পরীক্ষামূলক ভাবে মহাকাশযান পাঠায়। তাতেই এককভাবে চালক হিসেবে ছিলেন কোমারভ। উদ্দেশ্য ছিল, সয়ুজ ১ পাঠানোর কয়েক দিনের মধ্যেই মাহাকাশে সয়ুজ ২কে পাঠানো হবে। সেখানে থাকবেন আরও দুই মহাকাশচারী। সয়ুজ ১ আগে পৌঁছে অর্বিটে চলতে শুরু করবে, নিজের কাজ শুরু করবে।
কিন্তু এখানেই একটা প্রবাদ সত্যি হয়ে দেখা দিল, বাস্তব কল্পনার থেকেও বিচিত্র। কাহিনি ঘুরতে শুরু করল অন্য দিকে। সয়ুজ ১ অর্বিটে পৌঁছনোর পরেই, সোলার প্যানেলের কাজ বন্ধ করে দেয়। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়ায়, সয়ুজ ২কে আর পাঠানোই হয়নি। এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়, তখন অর্বিটে একা স্পেস শাটলে বসে কোমারভ। তাঁর কাছে বার্তা পাঠানো হয়। এদিকে, পরিস্থিতি বেগতিক বোঝার পর, কোমারভ শাটল ছেড়ে একটি ক্যাপসুলে চড়ে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া শুরু করেন। কোমারভের স্পেস ক্যাপসুল যখন পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে, তখনই ঘটে বিপর্যয়। বিকল হয়ে যায় যন্ত্র, এমনকী প্যারাসুটও কাজ করছিল না। ক্যপসুলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভারসাম্য ও গতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আসতেই প্রবল ঘর্ষণে পুরো ক্যাপসুল কয়েক মুহূর্তে অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হয়। আকাশ পথেই জ্বলতে শুরু করে ক্যাপসুলটি। সেই সময়ই, কোমারভ স্পেস স্টেশনে বার্তা পাঠান, তাঁর ক্যাপসুল জ্বলছে, তাপ ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু কন্ট্রোলরুমে এই শব্দ, আর্ত চিৎকার শোনা ছাড়া কারও কিছু করার ছিল না।