
The Truth of Bengal, Mou Basu: লেখাপড়ার জন্য যে নির্দিষ্ট কোনো বয়স হয় না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ লালরিঙথারা নামে মিজোরামের ৭৮ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ। “আশিতে” পৌঁছতে এখনো বছর ২ বাকি মিজোরামের ওই বৃদ্ধের। এই বয়সেও অনেক কমবয়সীদের ফিটনেসে টেক্কা দিতে পারেন লালরিঙথারা। ৭৮ বছর বয়সেও প্রতিদিন ৩ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করেন তিনি। ছোটোবেলায় পারিবারিক কারণে ও অর্থের অভাবে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি মিজোরামের ওই বৃদ্ধ। তাই ৭৮ বছর বয়সে ফের স্কুলে ভরতি হয়েছেন তিনি নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে।
১৯৪৫ সালে মিজোরাম ও মায়ানমার সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত খুয়াংলেঙ গ্রামে জন্ম লালরিঙথারা নামে ওই বৃদ্ধের। অকালে বাবাকে হারান তিনি। লালরিঙথারার মা অথৈ জলে পড়েন স্বামীকে হারিয়ে। তীব্র আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয় দিন আনি দিন খাই পরিবারে। মাত্র ২ বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়া লালরিঙথারা বাধ্য হন ওইটুকু বয়সেই মায়ের সঙ্গে চাষের জমিতে কাজে নেমে পড়তে। নিজের গ্রামের স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ওই বৃদ্ধ। এরপর রোজগারের জন্য অনত্র ছেলেকে নিয়ে চলে যান লালরিঙথারার মা। ফলে ছেদ পড়ে পড়াশোনায়। ৩ বছর পর ছেলেকে ফের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি করান বৃদ্ধের মা। কিন্তু তারপরও বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে লালরিঙথারা নামে মিজোরামের ওই বৃদ্ধের স্কুলশিক্ষা।
চাষের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি গ্রামের গির্জাতেও নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে দিন গুজরান করতে হয়েছে মিজোরামের ওই বৃদ্ধকে। এই ৭৮ বছর বয়সেও এখনো গির্জার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন তিনি। শত অসুবিধা সত্ত্বেও পড়াশোনা করার ইচ্ছে বা মনের সুপ্ত বাসনা কখনো ত্যাগ করেননি তিনি। অদম্য মনোবলের জোরে এই বৃদ্ধ বয়সেও রোজ স্কুলে যান লালরিঙথারা। নিজের নাতি-নাতনির বয়সীদের সঙ্গে বসে লেখাপড়া করেন। স্কুলপাঠে ছেদ পড়ার ৭০ বছর পর ২০১৮ সালে ফের পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি হন লালরিঙথারা। কিন্তু তাঁর গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই পড়া যায়। গ্রামে আর কোনো স্কুল নেই। চলতি বছরের এপ্রিলে ৩ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি স্কুলে ভরতি হন তিনি। স্কুলের শিক্ষকরা তাঁর লেখাপড়ার প্রতি নিষ্ঠা দেখে তাঁকে বইখাতা ও স্কুলের পোশাক দেন। রোদ হোক কিংবা বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা হোক কিংবা প্রবল ঠান্ডা, স্কুলে একদিনও কামাই করেন না লালরিঙথারা।