অফবিটফিচার

চিনের এক নিষিদ্ধ নগরীর নাগরিকদের কথা! লুপ্ত হচ্ছে মানবিকতা, নীরব মুসলিম বিশ্ব

China Unexplored City

The Truth of Bengal: বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলির মধ্যে একটির নাম ‘1984’। ১৯৪৯ সালে এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন জর্জ ওরওয়েল। ওনার আরও একটি ভালো বই হল ‘অ্যানিমেল ফার্ম’। 1984 এই বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন, লেখক এমন এক বিশ্ব পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যা আজকের দিনে অনেকটাই সমকালীন হতে বসেছে। যেমন, যেখানে জনজীবন সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীন হয়ে যাচ্ছে। আপনি কী খাবেন, কী পরবেন, কীভাবে হাসবেন, কীভাবে কাঁদবেন, সবটাই নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। এমন এক ডিস্টোপিয়ান দুনিয়ায় কী ভাবে বেঁচে থাকা যায়, তারই বড় উদাহরণ 1984।

আমরা প্রত্যেকেই চাই ইউটোপিয়ান দুনিয়ায় বাস করতে কিন্তু সেই জায়গায় দুনিয়া যদি ডিস্টোপিয়ান হয়ে ওঠে, তাহলে কেমন হয়! বইটি যখন লেখা হয়, তার কয়েক দশক পরেও মানুষ ভাবত, এটি কাল্পনিক উপন্যাস ছাড়া আর কিছু নিয়। ভরপুর মনোরঞ্জন রয়েছে এই উপন্যাসে। কাল্পনিক উপন্যাসের চিত্রই যেন বাস্তব রূপ নিতে চলেছে, চিনের সিনজিয়াং প্রদেশের উইগোর মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে।

এই প্রদেশে প্রতি একশো মিটার অন্তর রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সবসময় নাগরিকদের  পরিচয়পত্র বহন করতে হয়। যে কোনও সময়, যে কোনও স্থানে তাদের চেক করা হয়। এর উপরে, তাদের আচার ব্যবহার দেখে রেটিং করা হয়,। সেই রেটিং নির্ভর করে, কারা সরকারি সুযোগ কতটা পাবে।

হালের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে নজর দিলে দেখা যাবে, ২০১৮ সালে ১ জানুয়ারি চিন, আফগানিস্তানের বদকশন প্রদেশে একটি সন্ত্রাস মোকাবিলার বেস বানাতে চায়। কারণ,  আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে যাতে কেউ চিনে প্রবেশ না করতে পারে এবং সিনজিয়াং প্রদেশে উইগোর মুসলিম রয়েছে তাদের যাতে উগ্রপন্থী ভাবধারায় প্রভাবিত না করতে পারে।

এই বেস নির্মাণে অর্থ ঢালছে চিন।  তবে সেখানে চিনা সেনা মোতায়েন থাকবে কিনা, সে বিষয়ে কোনও বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, চিনের এই পদক্ষেপে প্রশ্ন কেন উঠছে? উত্তর হল, চিনে, এই উইগোরদের সঙ্গে মূল পার্থক্য রয়েছে হাং চিনাদের। চিনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে হাং চিনা। এদের খাওয়া, ভাষা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি পুরোপুরি আলাদা। কিন্তু সিনজিয়াং প্রদেশে মূলত পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায়, তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনযাত্রা আলাদা হাংদের থেকে। একদিকে উইগোররা মূলত ইসলাম ধর্ম মেনে চলে। অন্যদিকে হাংদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ নাস্তিক, তারা কোনও ধর্মই মানে না। সিনজিয়াং, চিনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ, পাশাপাশি এই প্রদেশে লাগোয়া রয়েছে আটটি দেশের সীমা। এবং স্রেফ কাগজে কলমে এই প্রদেশ স্বশাসিত।

বর্তমানে উইগোর মুসলিমদের দাবি, তাদের প্রতি বৈষম্য দেখাচ্ছে চিন। যবে থেকে চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর শুরু হয়েছে, সেই সময় থেকে হাং চিনারা বড় মাত্রায় সিংজিয়াং প্রদেশে আসতে শুরু করে। কারণ শিল্প, রাস্তা, নগরায়নের কাজ হচ্ছে, মাইন্সের কাজও শুরু হয়েছে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এই এলাকার উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন উইগোর মুসলিমরাও, যা স্বাভাবিত ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কিন্তু না এখানের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সিংজিয়ানে যা উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে হাং চিনারাই সমস্ত চাকরি পেয়েছে। চিনের কমিউনিস্ট সরকার মনে করে, হাং চিনারা অনেকটাই বিশ্বস্ত। আর চিনের সবচেয়ে বড় ভয়, এই প্রদেশে, উগ্রপন্থাবাদ। যে কোনও দিন যে কোনও সময় শুরু হতে পারে, এই স্বশাসিত অঞ্চল চিনের থেকে যে কোনও দিন আলাদা হয়ে যেতে পারে। এখানে তিব্বতের সিঁদুরে মেঘ এখনও দেখে চিনারা।

সারা বিশ্বে এমন ঘটনা, যে কোনও কোনায়, যে কোনও দেশে ঘটলে, তার কড়া বিরোধ লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু চিনের ক্ষেত্রে গোটা মুসলিম বিশ্ব অদ্ভুত ভাবে নীরব। পাকিস্তানও সম্পূর্ণ চুপ কারণ, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে চিনের সঙ্গে। শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, চিন সরকার চায়, ওই প্রদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, শিল্প হচ্ছে বা পড়শি দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লক্ষ্যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানে কোনওরকম অশান্তিকর পরিবেশ গড়ে না উঠুক। তাই, চিন সরকার চায়, এই কর্মকাণ্ডে শান্তি বজায় রাখতে উইগোরের তুলনায় হাং লোকেরা কাজ করুক।