মানসিক চাপ কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে সুস্বাস্থ্যের “পাওয়ারহাউজ” তেজপাতা
Health benefit of bay leaf

The Truth of Bengal, Mou Basu: নামেই যার আছে তেজ সেই তেজপাতাকে এক কথায় বলা যায় পুষ্টিগুণের আধার, সুস্বাস্থ্যের পাওয়ার হাউজ। মাংস, পায়েস, আচার, আলুরদম প্রায় সব কিছুতেই তেজপাতার ব্যবহার করা হয়। নিরামিষ হোক কিংবা আমিষ, তেজপাতা ব্যবহার হয় প্রায় সব ধরনের রান্নাতেই স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে কাজ করে। তেজপাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল ‘Laurus nobilis’। এক চামচ তেজপাতা গুঁড়োতে ৫.৬ ক্যালরি শক্তি মেলে। ১ গ্রামেরও কম প্রোটিন ও ফ্যাট বা চর্বি। এক গ্রামেরও কম ফাইবার ও শর্করা। এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এছাড়া পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, তামা, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬ ও সি, রাইবোফ্ল্যাভিন আর দস্তা।
শুধু বাঙালি রান্নাই নয় বিরিয়ানি, মোগলাই এমনকী ফরাসি রান্নাতেও ব্যবহার করা হয় তেজপাতা। ওষুধিগুণে সমৃদ্ধ তেজপাতা শরীর ভালো রাখতেও সাহায্য করে। তেজপাতার মধ্যে রয়েছে লিনালুল (linalool) নামক এটি উপাদান। এটি উৎকণ্ঠা কাটাতে, শান্ত থাকতে ও হতাশা দূর করতে সহায়তা করে। স্ট্রেস আধুনিক জীবনের অঙ্গ। স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ কমাতে তাই নিয়মিত ডায়েটে রাখুন তেজপাতা। তেজপাতায় থাকা ‘লিনালুল’ নামে একটি পদার্থ, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসারণ কমায়। মানসিক উত্তেজনা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে তেজপাতা। মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধেও লড়তে সাহায্য করে।
পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। যে কোনো রকম পেটের গোলমাল সারাতে অব্যর্থ দাওয়াই হল তেজপাতা। শরীরে টক্সিন বের করে দেয় তেজপাতা। পেটের গোলমাল হলে তেজপাতায় থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমস্যা দূর করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের সমস্যাও দূর করে তেজপাতা। অনেক সময় কিছু খাবারে জটিল প্রোটিন পাওয়া যায় তার জন্য খাবার সহজে হজম হয় না। তেজপাতায় থাকা উৎসেচক হজমে সহায়তা করে।
হার্টের বন্ধু তেজপাতা। তেজপাতায় পাওয়া যায় ক্যাফেইক অ্যাসিড, রুটিনের মতো নানান অর্গানিক পদার্থ যা আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। হার্টের স্বাস্থ্যর জন্য তেজপাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সব অর্গানিক পদার্থ হার্টের ক্যাপিলারি ওয়ালকে মজবুত করে। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম থেকে বের করে দেয়।
ক্লিনিকাল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড নিউট্রিশন নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে ৩০ দিন ধরে যদি নিয়মিত রোজ ১-৩ চামচ তেজপাতা গুঁড়ো খাওয়া হয় জলে ফুটিয়ে তা’হলে রক্তে গ্লুকোজ, ট্রাইগ্লিসারাইড আর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায় তেজপাতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজপাতা পোড়ানো ধোঁয়া টানলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে। এর ফলে কমে ডায়াবেটিসের মাত্রা।
তেজপাতা অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান হিসেবে পরিচিত। তেজপাতার মধ্যে থাকা প্রধান যৌগ সিনিয়োল ব্লাড ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে।গবেষণায় দেখা গেছে আলসার, ক্যানসারের জন্য দায়ী ‘এইচ পাইলরি’ ব্যাক্টেরিয়াকে দমন করে তেজপাতা। এছাড়াও আরো অনেক গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম তেজপাতা।
পেশি অনেক সময় ফুলে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি গুণ থাকায় তেজপাতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেজপাতায় পাওয়া যায় ‘পার্থেনোলাইড’ নামে একটি ফাইটো-নিউট্রিন্ট পদার্থ যা ফোলা ভাব কমায়। যে কোনো রকম জ্বালাযন্ত্রণায় উপশম করে তেজপাতা।
মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে তেজপাতা। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তেজ পাতা দারুণ উপকারী। অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণসম্পন্ন তেজপাতা ইকোলাই, স্ট্যাফিলোকাস ব্যাক্টেরিয়াকে দমন করে। গবেষকদের মতানুযায়ী, দাঁতে ব্যথা, পোকার সমস্যা, ক্ষয় কিংবা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এ ধরনের সমস্যা গুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে তেজপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২-৩টি তেজপাতা উষ্ণ গরম জলের মধ্যে ফুটিয়ে নিতে হবে। তেজপাতার জলটিতে ভাপ নিলে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক কাপ করে গরম সুগন্ধি তেজপাতার চা খান।
কীভাবে বানাবেন তেজপাতার চা-
পরিমাণ মতো জল নিন। ৩টি তেজপাতা নিন। একটা বড়ো অথবা ২টি মাঝারি সাইজের পাতিলেবুর রস। সবগুলি উপকরণ পাত্রে দিয়ে একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন ভালো করে। ঈষদুষ্ণ অবস্থায় খান।