
মৌ বসু: আজকালকার ব্যস্তজীবনে কাগজ, পেন, পেন্সিলের ব্যবহার দিন কে দিন কমছে। লেখাজোকাও যা হয় তাও হয় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর কম্পিউটারে। অনেকেরই মনে খেদ, প্রযুক্তির ব্যবহারে হাতের লেখা আর সুদৃশ্য নেই, বরং হিজিবিজি হয়ে গেছে। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারে টাইপিংয়ের চেয়েও হাতে লিখেই ভালো ভাবে বিভিন্ন ভাষা শেখা যায়। ‘ScienceAlert’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। হাতের লেখা হিজিবিজি, অস্পষ্ট হলে অনেকেই নানান রকম বিড়ম্বনায় পড়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে উল্টো কথা। গ্রাফোলজি বা হাতের লেখা বিজ্ঞান অনুসারে, যে সব মানুষের হাতের লেখা হিজিবিজি, অস্পষ্ট, সুন্দর নয়, তারা আসলে খুবই সৃষ্টিশীল মানুষ। হিজিবিজি হাতের লেখার মধ্যে একটা নিজস্বতা বোধ বা ইনডিভিজুয়ালিস্টিক অ্যাপ্রোচ থাকে। তাদের চিন্তাভাবনা একেবারে নিজস্ব হয়, গতানুগতিক ছন্দে বাঁধা নয়।
গ্রাফোলজি অনুসারে হাতের লেখা হিজিবিজি হলে সেই ব্যক্তি স্বাবলম্বী হন। অন্যকে অনুসরণ করা নয় এমন ব্যক্তির চিন্তাভাবনার মধ্যে নিজস্বতা থাকে। লেখক হলে এমন ব্যক্তি কপিবুক স্টাইল বা গতেবাঁধা লেখা লিখতে পছন্দ করেন না। নিজস্ব স্টাইলে লেখেন।এমন ব্যক্তি সব সময় যুগের চেয়ে এককদম এগিয়ে থেকে ভাবনাচিন্তা করেন। সমাজ যতই নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে চেষ্টা করবে এমন মানুষ সেই বেড়াজাল ভাঙবেনই। হিজিবিজি লেখার মানে, আপনি এতটাই বুদ্ধিমান যে আপনার মস্তিষ্কের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে পাচ্ছে না পেন। চিন্তা করবেন না, সিগমন্ড ফ্রয়েড, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের হাতের লেখাও হিজিবিজি ছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, শারীর বিজ্ঞান অর্থাৎ মানুষের শারীরিক গঠন কেমন তার ওপর নির্ভর করে হাতের লেখা কার কেমন হবে। যেমন, হাতের হাড়ের গঠন কেমন তার ওপর নির্ভর করে কে কেমন ভাবে পেন বা পেন্সিল ধরবে। চোখ আর হাতের সমন্বয়, মানসিক সক্ষমতা আর মাসল মেমোরির ওপরও নির্ভর করে হাতের লেখা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীর আর মনে নানান রকম বদল আসে। তাই সেই অনুসারে বদলায় হাতের লেখাও।
একজনের আঙুলের ছাপ যেমন অন্যজনের সঙ্গে মেলে না তেমনই একজনের হাতের লেখাও অন্যজনের সঙ্গে মেলে না। শুধু হাতের লেখা বিশ্লেষণ করলেই জানা যায় মানুষের মনে কী চলছে। গ্রাফোলজি অনুসারে, ছোটো ছোটো অক্ষরে যাঁরা লেখেন তাঁরা সতর্ক হয়ে কাজ করেন। আবার অক্ষরের মধ্যে যাঁরা বড়ো ফাঁক রাখেন তাঁরা ভিড়ের মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। যাঁরা গায়ে গায়ে লেখেন তাঁরা মিশুকে হন। সোজা অক্ষরে লেখেন যাঁরা তাঁদের যুক্তিবোধ বেশি।যাঁরা খুব চেপে লেখেন তাঁদের দায়িত্ববোধ বেশি। আলতো ভাবে লেখেন যাঁরা তাঁরা সংবেদনশীল হন। যাঁদের হাতের লেখা টানা টানা, তাঁদের মধ্যে বুদ্ধি, কৌতুহল ও আগ্রাসী মনোভাব বেশি থাকে। ডানদিকে হেলিয়ে লেখেন যাঁরা তাঁরা আবেগপ্রবণ।যাঁরা খুব দ্রুত লেখেন তাঁদের মনও তাড়াতাড়ি চলে। এঁরা খুব সহজে যে কোনো বিষয় বুঝতে পারেন।যাঁরা মার্জিন দিয়ে লেখেন তাঁরা খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনাযাপন করেন।