‘হিট আইল্যান্ডে’ পরিণত কলকাতা, পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর চেয়েও কেন এবছর কলকাতায় গরমের অনুভূতি এত বেশি?
Why is Kolkata feeling so hot this year than the western districts?

The Truth of Bengal, মৌ বসু: খাতায় কলমে শনিবার পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বীরভূমের শ্রীনিকেতনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, বাঁকুড়ায় ৪৪.২ ডিগ্রি আর পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে ৪৩.৪ ডিগ্রি। কলকাতায় সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটা বিষয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কলকাতার তুলনায় অনেকটা বেশি থাকলেও সেখানে কিন্তু অসহ্য গরমের অনুভূতি তুলনামূলক ভাবে কম। সন্ধ্যা হলেই ফুরফুরে হাওয়া, মনোরম পরিবেশ। অথচ কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চলে গরমের অনুভূতি এবার অনেক বেশি। সূর্য অস্ত গেলেও স্বস্তির কোনো নামগন্ধ নেই। কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের অবস্থান ক্রান্তীয় বলয়ের মধ্যে। উত্তর গোলার্ধের কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে যে অঞ্চলটি পড়ে, সেটিকে ক্রান্তীয় বলয় বলা হয়। ক্রান্তীয় বলয়ের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে বছরে একটি সময় আসে যখন সূর্য সরাসরি ওপরে অবস্থান করে, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসটাই সেই সময়।
এত কেন অসহনীয় অনুভূত হচ্ছে গরম?
আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদদের মতে এবার শহর কলকাতা শহুরে তাপ দ্বীপ বা Urban Heat Island-এ পরিণত হচ্ছে। দিনের বেলায় রোদের তেজের কারণে শহুরের মাটি তপ্ত হয়ে ওঠে, সেই তাপটা সন্ধ্যা হলেও আটকে যাচ্ছে শহরের বায়ুমণ্ডলেই। বেরিয়ে যেতে পারছে না। একে বলে Heat Trapping। পরিবেশবিদদের মতে পরিকল্পনা না করে শহরের এদিকে ওদিকে গজিয়ে উঠেছে বড়ো বড়ো বহুতল, চাপ বাড়িয়ে তুলেছে জনঘনত্ব, এরসঙ্গে আছে যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ ও বাতানকুল যন্ত্র থেকে নির্গত তাপ। এর পাশাপাশি অবাধে গাছপালা কাটা হচ্ছে, যথেচ্ছাচার ভাবে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এসব মিলিত কারণে কলকাতার বায়ুমণ্ডল ভেদ করে গরম বাতাস বেরোতে পাচ্ছে না। তাপ আটকে পড়ছে। তাপ দ্বীপে পরিণত হচ্ছে আমাদের প্রিয় শহর।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি স্বাভাবিকের থেকে অন্তত পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে এবং তা চল্লিশ ডিগ্রির ওপরে রেকর্ড করা হয়, সেই পরিস্থিতিকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। আপাতত গোটা দক্ষিণবঙ্গ তাপপ্রবাহের কবলে। শনিবারও অতি প্রবল তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি ছিল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও বীরভূমে। কলকাতা সহ বাকি জেলায় ছিল তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি। রবিবারও একই রকম পরিস্থিতি চলবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি চলবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। বুধবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে অস্বস্তিকর গরম থাকবে। গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলায় আপাতত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি থাকছে। আগামী ৫ দিন তাপমাত্রার পারদের কোনো হেরফের হবে না বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৭৫-৮৫% থাকবে।
গরম আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসে এই রকম আবহাওয়াই আমরা দেখে এসেছি। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি কলকাতার গরমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এবছর কলকাতায় গরমের অনুভূতি আগের থেকে অনেকটাই আলাদা। কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গ ইদানিং যে গরম পড়ছে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি গরম পড়েছে ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালে। গত বছর টানা ৯ দিন গোটা দক্ষিণবঙ্গ তাপপ্রবাহের কবলে ছিল। এর মধ্যে পাঁচ দিন কলকাতায় (১৩,১৪,১৭,১৯ এবং ২০ এপ্রিল) এবং টানা ন’দিন পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল। কিন্তু এবার কলকাতায় গরমের চরিত্র আলাদা।