ভিন রাজ্যের লাখো লাখো ‘ভূত’ ভোটারে বাংলায় সতর্ক তৃণমূল, দলকে বার্তা অভিষেকের
Trinamool is alert in Bengal about millions of 'ghost' voters from other states, Abhishek's message to the party

Truth Of Bengal: দিল্লি, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় গত লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বছরখানেকের মধ্যে। আর এই এক বছরে লক্ষ লক্ষ ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে। ভার্চুয়াল বৈঠকে এই তিন রাজ্যের ভোট বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনের সাত মাস পরে দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হয়েছে। চার লক্ষ বারো হাজার নয়া ভোটার যোগ করেছে।
মহারাষ্ট্রতে চার মাসের ব্যবধানে ৩৯ লক্ষ নয়া ভোটার যোগ করেছে। খুব ঠান্ডা মাথায় এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই সবাইকে বলছি অত্যন্ত সাবধানে ঠান্ডা মাথায় সতর্ক হয়ে কাজ করবেন। এবার ওদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। ২০২০ থেকে ২০২৪ এই চার বছরে দিল্লিতে ভোটার বৃদ্ধি ঘটেছিল চার লক্ষ। আর ২০২৪ থেকে ২০২৫ এর মধ্যে ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে চার লক্ষের বেশি। মহারাষ্ট্রে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভোটার বৃদ্ধি ঘটেছিল ৩২ লক্ষ। আর ২০২৪ থেকে ২৫ সালের মধ্যে ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ লক্ষ। সোজা পথে এই বৃদ্ধি সম্ভব নয়। কারসাজি রয়েছে এই ভোটার বৃদ্ধির মধ্যে।
পশ্চিমবঙ্গেও একই কৌশলে ভুয়ো ভোটারের নাম ঢুকিয়ে নির্বাচনের সুবিধা পেতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির টার্গেট পশ্চিমবঙ্গে ২৫ লক্ষ নতুন ভোটারের নাম সংযোজন করা। পিছনের দরজা দিয়ে এই নাম ঢোকাতে চাইছে তারা। অন্যদিকে ২৫ লক্ষ স্বচ্ছ ভোটারের নাম কেটে বাদ দেওয়ার কৌশল করেছে। অর্থাৎ ৫০ লক্ষের সুবিধা নিতে চাইছে বিজেপি। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। ৬ মাস সময় আছে, এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়তে হবে। নির্দেশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
গত ২৭ তারিখ নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিকনির্দেশিকা দিয়েছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে একের পর ভুয়ো ভোটারের নাম বাংলার ভোটার লিস্টে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক নামের তালিকা তুলে ধরেন। অভিষেক বলেন, ইতিমধ্যেই আমাদের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। আমাদের অবস্থান জানানো হয়েছে। একই এপিকে একাধিক নাম। পরবর্তী সময়ে কমিশন যা বলেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাদের কারচুপি আমরা ধরে ফেলেছি। তাই তাদের গায়ে জ্বালা হয়েছে।
কমিশনের ভূমিকা করোনার সময়ে আপনারা ২০২১ সালে দেখেছেন। আট দফায় ভোট করেছে। ২০২৪ সালে একের পর এক অফিসার বদল করেছে। কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছে বিজেপি। আর জি কর নিয়ে খাটো করে দেখাতে চেয়েছে। বাংলাকে কিভাবে ছোট করে দেখাতে হয় সেই চেষ্টা করেছে। ভুয়ো ভোটার মনে হলে সাথে সাথে আলোচনা করে ফর্ম-৭ পূরণ করবেন। নাম বাদ দিতে বলবেন। যারা বাইরে থাকেন, ভোটের দিন আসেন, তাদের ষড়যন্ত্র করে ভোট আটকানোর চেষ্টা করছেন। যারা পরিযায়ী শ্রমিক আছেন তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। যে নয়া কমিটি করা হচ্ছে। তারা কিন্তু বছরভর এই কাজ করবেন।
স্ক্রুটিনিতে একা যাবেন না। যারা সক্রিয় কর্মী তাদের চার, পাঁচ জনকে নিয়ে যাবেন। বুথের সক্রিয় কর্মীদের ইনভলভ করুন। খালি টিক মেরে চলে এলে হবে না। আবার বলছি এনসিপি, কংগ্রেস এই ভুল ধরতে পারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা ধরে ফেলে এক্সপোজ করে দিয়েছেন। এই জন্যেই বলি বাংলা-গুজরাত, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ নয়। ওদের পরিকল্পনা ছিল, বাইরে থেকে এই সব ভোটার নিয়ে এসে ভোট করানোর।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল চার হাজার ভোটে হেরে গেছেন। ওনার বিধানসভায় ৩৫ হাজার ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল। এটা ওরা ভোটের পরে ধরতে পেরেছে। তার আগে কারচুপি করে ফেলেছে। আমরা কারচুপি ধরে ফেলেছি। এর আগে বাংলাকে টাকা দিয়েছে বলেছিল। কিন্তু যেই তথ্য প্রকাশ করতে বলেছি সেটা পারেনি। বিজেপির প্ল্যান ২৫ লাখ কেটে আরও ২৫ লাখ যোগ করার। বিজেপির পরিকল্পনা হচ্ছে ভোটার ২৫ লাখ বাদ দেবে। কমিশনে আমাদের দাবি ডিলিটেশন আর অ্যডিশন তালিকা বার করুন। সেটা করে না। আমরা কারচুপি ধরে ফেলেছি।
আমার অফিসের ও আই প্যাকের নাম করে পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অনেক অভিযোগ এসেছে। অনেক গ্রেফতার হয়েছে। এধরনের কোন অভিযোগ এলে সরাসরি দলকে জানানোর কথা বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি ফোন নম্বর দিয়েছেন তিনি। ফোন নম্বর হল ৮১৪২৬৮১৪২৬। অভিষেক বলেন, যদি কেউ বলে আইপ্যাক থেকে এসেছি এই নম্বরে ভেরিফাই করবেন। আমার অফিস থেকে গেলে আগাম বার্তা যাবে জেলা সভাপতির কাছে। নাহলে তাকে এন্টারটেন করবেন না। আমার অফিসে রিপোর্ট করবেন।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সন্দেশখালি থেকে আর জি কর – নানা চক্রান্ত হয়েছিল। আর জি কর নিন্দনীয় ঘটনা। আর জি কর নিয়ে খাটো করে দেখাতে চেয়েছে বাংলাকে। বাংলাকে কলুষিত করতে চেয়েছে। বাংলাকে কিভাবে ছোট করে দেখাতে হয়, সেই চেষ্টা করেছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে বিরোধীদের চক্রান্ত। অভিষেক বলেন, বিজেপি বলছে বাংলাদেশ থেকে তৃণমূল ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়েছে। বিএসএফ দেখে সীমান্ত। তার ডিজিকে গ্রেফতার করা উচিত। বিজেপির এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহলে তো বিএসএফ এর জন্য দায়ী।