চাকরি গিয়েছে কোর্টের রায়ে সরকার পাশে মানবিকভাবে
The government is humanely standing by the court's verdict on losing jobs

Truth Of Bengal: সুপ্রিম কোর্টের রায় চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর। এতগুলি শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। যা নিয়ে ইতিমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সেইসঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে কীভাবে বিষয়টির সুরাহা করা যায় ইতিমধ্যে সেই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘যারা যোগ্য তারা নিশ্চিন্ত থাকুন। তাদের চাকরি মর্যাদার সঙ্গে নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্যের।’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে। সেখানে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী সব রকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু আশ্বাস দেওয়াই নয় ইতিমধ্যে তিনি নানা পদক্ষেপও করতে শুরু করেছেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে কোন পথ বের করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তারপরও দেখা যাচ্ছে দিকে দিকে আন্দোলন গড়ে উঠছে। আর সেই আন্দোলনে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখাচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ডিআই অফিসে অভিযান করেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। কসবায় ডিআই অফিসে অভিযানে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ পুলিশের উপর আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। তাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
এই অশান্তির যে ছবি সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওই ভিড়ে এমন কিছু মুখ ছিলেন যারা হয়তো চাকরিহারা শিক্ষক। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা হয়তো চাকরিহারা শিক্ষকদের ভিড়ে মিশে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকানোর চেষ্টা করেও আক্রান্ত হয়েছে। তারপর পাল্টা পুলিশ কিছুটা প্রতিরোধ করে লাঠি চালায়। আর সেই লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন চাকরিহারা শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের তরফে।
এখানে প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সঙ্গে সঙ্গেই চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইভাবে এত শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি ব্যথিত সেটাও বলেছেন বারবার। তাই তাঁর সরকারের তরফে যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার সবই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ সরকার অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে আছে, যাতে তাদের বঞ্চিত না হতে হয়।
সরকারের তরফে যখন এমন সদর্থক পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখন আন্দোলনকারীরা কি পারতেন না একটু ধৈর্য ধরে বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে। কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে চাকরিহারা শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাবে রাজনৈতিক উস্কানি দেওয়া হচ্ছে যাতে রাজ্যে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। এই আশঙ্কাটা যে অমূলক নয় তা দেখা যাচ্ছে। শুধু কসবা নয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ডিআই অফিস অভিযান ঘিরে যে ছবি সামনে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে চাকরিহারা শিক্ষকদের ভিড়ে মিশে আছেন এমন কিছু মুখ যারা শিক্ষকই নন। প্রশ্ন তারা কারা?
কসবায় পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তরফে সামাজিক মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ‘আজ কসবা ডিআই অফিসের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে যে, প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা, বিনা উসকানিতে পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং হিংসাত্মক আচরণ করে, যার মধ্যে মহিলা পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন। চারজন পুরুষ পুলিশকর্মী এবং দুইজন মহিলা পুলিশকর্মী আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগ করে। এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।’
কসবার ঘটনায় রাজ্যের মুখ্য সচিবের আবেদন, ‘চাকরিহারারা যে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন তা আমরা বুঝতে পারছি। সমস্ত মানবিক দিক দেখে যা করার দরকার সেভাবেই পদক্ষেপ করছি। শিক্ষক-শিক্ষিকা বন্ধুদের আমরা আবেদন করব, যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়। আপনারা কাজ করুন।
আগামী দিনে যাতে আইনের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হয় সেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’ কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, চাকরি হারা শিক্ষকদের লাথি মারছে পুলিশ এই ধরনের ছবি বাঞ্ছনীয় নয়। তবে সমস্ত ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’ এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার।