কলকাতা

গগনচুম্বী ৪২-এর ভীতে চাপা পড়ে রয়েছে, রেসুড়েদের এক অজানা অধ্যায়, ভ্যানিশ দ্বারভাঙ্গা রাজবাড়ি

Kolkata Building 42

The Truth Of Bengal: দ্বারভাঙ্গা, নামটা শুনলেই কেমন যেন বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের কথা মনে পড়ে কি? বা হয়তো কোনও কুখ্যাত এলাকার কথা! এখন প্রশ্ন, এই দ্বারভাঙ্গা সঙ্গে কলকাতা সম্পর্ক কী! দ্বারভাঙ্গার সঙ্গে কলকাতা সম্পর্ক খোঁজার আগে কিছুটা ঐতিহাসিক ভণিতায় আসা যাক। বাংলার বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জয় বাবা ফেলুনাথ ছবির কথা মনে আছে? হ্যাঁর সেই বিখ্যাত দৃশ্য, যেখানে মছলিবাবার ডেরা বসেছিল! ওই ঘাটের নাম দ্বারভাঙ্গা ঘাট। ওই ঘাট তৈরি করেছিলেন দ্বারভাঙ্গার রাজা। সেই দ্বারভাঙ্গা রাজাদের একটি অট্টালিকা কলকাতাতেও ছিল। এখন প্রশ্ন, সেটি কোথায় ছিল?

তিলোত্তমার কোল থেকে ধীরে ধীরে কত প্রচীন ঐতিহাসিক বাড়ি উধাও হয়ে গিয়েছে, জাস্ট ভ্যানিশ। ঠিক তেমনই হারিয়ে গিয়েছে। ৪২ চৌরঙ্গী রোড। এখানেই ছিল দ্বারভাঙ্গা রাজবাড়ি। তবে এই বাড়ি দ্বারভাঙ্গা রাজারা তৈরি করেননি। তারও পুরনো ইতিহাস রয়েছে।  আগে সেটা জেনে নেওয়া যাক। আরও পড়ুন-ঢাকার পোলার স্মরণে ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’

একটা সময় ছিল, তখন ৪২ চৌরঙ্গী রোডের বাড়িটিকে বলা হত রেসুরে বাড়ি।  বাড়ির থেকে অট্টালিকা বলা ভালো। সেটি তৈরি করেছিলেন, এডমন্ড এজরা (যার নামানুসারে কলকাতা রাস্তা হয়েছে এজরা স্ট্রিট)। বাণিজ্য সূত্রে নিউ ইউয়র্ক থেকে তিনি এদেশে আসেন এবং  বহু বিষয় সম্পত্তি কেনেন। অধিকাংশই রাধাবাজার ও ডালহাউসি এলাকায়।  তাঁর সংগ্রহে ছিল ছিল নানা জাতের রেসের ঘোড়া। তিনি যেমন রেসুড়ে ছিলেন, তেমনই আর এক রেসুড়ে নাম গলস্টন তাঁর কাছ থেকে ৪২ চৌরঙ্গী রোডের জমিটি কেনেন। তিনি রেসে জিতে, তিনি ৩৬ থেকে ৪২ চৌরঙ্গী পর্যন্ত যতটা জমি ছিল পুরোটাই কিনে নেন। আবার রেসের মাঠে এই বিশাল সম্পত্তি হাতছাড়াও হয়ে যায়।  কলকাতায় তখন গলস্টনের আস্তাবলই ছিল সবচেয়ে বড়।  সেই সময় ঘোড়ার মালিক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে।

রেসে হেরে যাওয়ার পর, ৪২ চোরঙ্গী রোডের বাড়িটি, গলস্টোনের হাতছাড়া হয়। তখন অট্টালিকাটি কেনেন আর এক বাঙালি রেসুড়ে জনৈক মুখার্জি। অগত্যা রেসের মাঠে হেরে তিনিও ৪২ চৌরঙ্গী রোডের অট্টালিকাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। সব শেষে বাড়িটি কিনে নেন দ্বাভাঙ্গার মহারাজ কামেশ্বর সিং। অবিভক্ত বাংলা বিহার ওডিশার পাশাপাশি এই চৌরঙ্গীর বাড়ির জমির রেজিস্ট্রি হয়েছিল কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম কোর্টে।

কলকাতায় পোলো খেলার সূচনা হয়েছিল এই দ্বারভাঙ্গারাজ রাজাবাহাদুর বিশ্বেশ্বর সিংহের হাত ধরে। আজ যেখানে জীবন দ্বীপ বাড়িটি রয়েছে, সেই জায়গাটিও ছিল দ্বারভাঙ্গা রাজাদের। পোলো খেলার ঘোড়ার আস্তাবল ছিল ওখানে।  দ্বারভাঙ্গা রাজারা ইতিহাসে আজও উল্লেখযোগ্য কারণ, দ্বারভাঙ্গা রাজাদের যা সম্পত্তি ছিল, তা ভারতে আর কোনও জমিদারের ছিল না।  বেনারস, এলাহাবাদ, দিল্লি, সিমলা, দার্জিলিং, রাঁচি, মুম্বই, কলকাতা, কামাখ্যা, বাঁকুড়া এ ছাড়া আরও বহু জায়গায় ছিল বিপুল সম্পত্তি।

এখানে বলে রাখা ভালো, দ্বাভাঙ্গার রাজারা রেসুরেদের কাছ থেকে কলকাতার জমি কিনেছিলেন বটে কিন্তু, রেসের ভক্ত ছিলেন না।  যদিও রেসের মাঠে বড়দিনে আয়োজিত হত দ্বারভাঙ্গা গোল্ডকাপ। কলকাতার চৌরঙ্গী এলেকায় বেশ কিছু দূতাবাস রয়েছে। এ ছাড়া কোচবিহার, ঢেঙ্কানল, ডুমরাওয়ের রাজা মাহারাজাদের বাড়ি এবং হায়দরাবাদের নিজামের প্রাসাদও রয়েছে আশে পাশে। সেই অঞ্চলে দ্বারভাঙ্গা রাজাদের বাড়ি থাকবে না, এতো হয় না।  দ্বারভাঙ্গা রাজাদের নিয়ে আরও ইন্টেরেস্টিং তথ্য দিয়ে রাখি। একটা সময় এই রাজাদের নিজস্ব বিমান ও বিমান কোম্পানিও ছিল। চৌরঙ্গী রোডের প্রাসাদের দোতলায় ছিল এদের অফিস। ভারত-চিন যুদ্ধের সময় এই বিমান সংস্থাকে সরকার অধিগ্রহণ করে। তার আগে পর্যন্ত কলকাতা থেকে জ্যান্ত মাছ এই বিমানে করে দ্বারভাঙ্গায় যেত।