কলকাতা

বিষাদের নয় সফলতার উৎসবের উদযাপন কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননে

Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: দোরগোড়ায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে কয়েক দিন বাকি থাকলেও আকাশে বাতাসে এখন পুজো পুজো গন্ধ। মহাপঞ্চমী থেকে বিজয় দশমী, পুজোর এই ৬ দিনের জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে আট থেকে আশি সব বয়সী বাঙালিরা। পুজোর শেষ দিন অর্থাৎ বিজয়ার দিন বিষাদে ভরা মন নিয়েই “মায়ের পুজোর” সমাপন করি আমরা। কিন্তু এবারের পুজোয় কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম)-এর বাসিন্দাদের বার্তা “বিষাদ নয় থাক বিজয়ার আনন্দ”। তাই এবারের পুজোয় কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননে ” বিষাদের নয় সফলতার উৎসবের” উদযাপন করা হবে। ২১তম বছরে কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননের পুজোর থিম এবছর “শুভ বিজয়া”। সামগ্রিক সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন দীপাঞ্জন দে। প্রতিমাশিল্পী নিখিল মিস্ত্রি। আলো নির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন সুব্রত মল্লিক। আবহ নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন সাত্যকী বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননের কর্মকর্তা কার্তিক রায় জানান, প্রতি বছর শরৎকালে আমরা মা দুর্গার আরাধনা করি। শরৎকালে পুজো বলেই এই পুজোকে বলা হয় শারদীয়া।

মহাপঞ্চমী থেকে বিজয় দশমী, এই ৬ দিনে ষোড়শ উপাচারে মায়ের আরাধনা করা হয়। বিজয় দশমীর দিন “শুভ বিজয়া” সম্ভাষণের মধ্যে দিয়ে কিছুটা বিষাদগ্রস্ত মন নিয়েই মায়ের পুজোর সমাপন করি। প্রতিবছরই মা আসেন আমাদের কাছে। ৬ দিনের পুজো প্রকারের মধ্যে দিয়ে মা দুর্গা হরণ করেন আমাদের মনের মধ্যে থাকা ৬ রিপুকে। শেষে বিজয় লাভ হয় এক শুদ্ধ আত্মার। জন্ম হয় আবার এক নতুনের। তাই এই উৎসব মা দুর্গার করুণায় সাফল্যের। এ উৎসব উল্লাসের, এ উৎসব বিষাদের নয়। তাই আমরা একে অপরকে “শুভ বিজয়া” বলে সম্ভাষণ জানাই।”থিম শিল্পী দীপাঞ্জন দে জানান, “আমাদের এখানে মূল থিমের নাম দিয়েছি শুভ বিজয়া। ৬ দিনের দুর্গাপুজোয় ৪টি পর্যায় থাকে। মায়ের আবাহন, পুজো, ধ্যান, আহুতি ও শেষে মায়ের নিরঞ্জন হয়। প্রতিমা প্রতীকী স্বরূপ, মা যে অসুর নিধন করছেন তা হল আদতে আমাদের অন্তরে থাকা ষড়রিপু। আদতে আমাদের অন্তরে থাকা ষড়রিপুর বিসর্জন হচ্ছে আমাদের আত্মার জয় লাভ হচ্ছে। মণ্ডপে নৌকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে যাবতীয় সজ্জা। এবছর ঘোটক বা ঘোড়ায় আসছেন মা। কিন্তু সাধারণত নৌকায় দেবীর আগমনকে খুব শুভ বলে মানা হয়। দার্শনিক তত্ত্ব অনুযায়ী নৌকাকে দেখলে দেখা যাবে একটি নৌকা অনন্তের দিকে ভেসে যাচ্ছে।

সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাচ্ছে একটি নৌকা স্রোতের অভিমুখে। সেভাবে একজন মানুষও তাঁর অন্তরের ষড়রিপুকে দমন করে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে। রিপু সব সময়ই ক্ষতি করে এমন নয়। এক কথায় থিমের মাধ্যমে আমরা বার্তা দিচ্ছি প্রতিমার নিরঞ্জন নয় আসলে এ হল ষড়রিপুর নিরঞ্জন। মণ্ডপের সজ্জায় লোহা, পেতল, টিনের মতো হার্ড মেটেরিয়ালের পাশাপাশি খড়ের মতো সফট মেটেরিয়ালও ব্যবহার করা হয়েছে। রিপু আছে বলেই আমাদের জাগতিক সুখ, বোধ আছে। আবার মাত্রাতিরিক্ত রিপু ক্ষতিকর। এই পারস্পরিক ভারসাম্য বোঝাতেই ২ রকম মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ হাজার বর্গ ফুট এলাকাজুড়ে গড়ে উঠছে মণ্ডপ। মূল মণ্ডপে নদীর অববাহিকা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। প্রায় ৩০ ফুটের বেশি চওড়া একটা বিশাল নৌকা থাকছে। তার ওপর আরো ৮ খানা নৌকা থাকছে। ভিডিও প্রোজেকশন থাকছে। মূল প্রবেশপথে ৬টা চালচিত্র থাকছে। বিসর্জনের পর যেভাবে মাটিতে গেঁথে থাকে সেভাবে রাখা হচ্ছে। ষড়রিপুকে বোঝাতে ৬ রকম মেটেরিয়াল দিয়ে তুলে ধরা হবে চালচিত্র। খড়, তামা, পেতল, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও বাঁশ, এই ৬ রকম মেটেরিয়াল দিয়ে চালচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। গোটা মণ্ডপ সজ্জায় একটা “ছয়ের” খেলা আছে। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠাকুর হচ্ছে। “

Related Articles