কলকাতা

সাবেকি প্রতিমাতেই ১০৬ বছর ধরে নিষ্ঠাভরে পুজোয় ব্রতী মোহনবাগান বারোয়ারী

Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: শারদোৎসবের জন্য সেজে উঠেছে বাংলা। দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে বাঙালি আজ গ্লোবাল সিটিজেন। থিমের অভিনবত্বই হোক কিংবা সাবেকি পুজোর আভিজাত্য ও জৌলুস, চাকচিক্য-পুজোর ষোলআনা আমেজকে ভরপুর আনন্দে চেটেপুটে নিতে প্রস্তুত আট থেকে আশি, সকলেই। চারিদিকে এত থিমের ভিড়েও শতবর্ষ পেরিয়েও সাবেকিয়ানা, ঐতিহ্যকে অটুট রেখেছে উত্তর কলকাতার একটি বারোয়ারী দুর্গাপুজো। ১৯১৭ সালে তৈরি হয় মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাব। ক্লাবের নামের মধ্যেই রয়েছে বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য। কারণ, ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালির কাছে “সব খেলার সেরা ফুটবল”। শুধু বাঙালির নয় সমগ্র বাংলার মানুষের অহংকার ফুটবল ক্লাব মোহনবাগান। কারণ, ১৯১১ সালে খালি পায়ে ফুটবল খেলে অহংকারী ব্রিটিশদের দর্প চূর্ণ করেছিলেন মোহনবাগান ক্লাবের শিবদাস ভাদুড়ী, বিজয়দাস ভাদুড়ীর মতো ফুটবল খেলোয়াড়রা। কোথাও যেন তাঁরা পরাধীন ভারতে স্বাধীনতার আশ্বাস এনে দিয়েছিলেন। জাতীয় ক্লাব মোহনবাগান ক্লাবের জন্ম এই জায়গায়। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ফুটবলারদের হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জয় করা বাঙালি খেলোয়াড়রা এই পাড়াতেই ফুটবল প্র্যাকটিস করতেন। মোহনবাগান ক্লাবের নামেই মোহনবাগান লেন, মোহনবাগান রোয়ের নামকরণ হয়। কীর্তি মিত্রর ছেলে মোহনের নামেই মোহনবাগান ক্লাবের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। ১৯১১ সালের মোহনবাগানের ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড জয়ের অন্যতম নায়ক শিবদাস ভাদুড়ীর নামে নামাঙ্কিত শিবদাস ভাদুড়ী স্ট্রিট।

“মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাবের পুজোর কর্মকর্তা অরিন্দম দত্ত জানান, ১৯১৭ সালে জন্ম আমাদের ক্লাবের। এবছর আমাদের পুজোর ১০৭তম বছরের পুজো। গত ১০৬ বছর ধরে নিষ্ঠাভরে আমরা সাবেকিয়ানা বজায় রেখে পুজো করে চলেছি।” খুবই অনাড়ম্বর ভাবে পুজো হয়। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে পুজো হয় বলে আমাদের এখানেই প্রতি বছর পুষ্পাঞ্জলি দেন বিধায়ক ও কলকাতা পৌর নিগমের ডেপুটি মেয়র ও মেয়র ইন কাউন্সিল তথা ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরপিতা অতীন ঘোষ। তিনি আমাদের পুজোর চেয়ারপার্সন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার আমাদের পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক।”মোহনবাগান রো, মোহনবাগান লেন, কীর্তি মিত্র লেন, ফড়িয়াপুকুর (শিবদাস ভাদুড়ী স্ট্রিট) ঘিরে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের ঠিক আগেই যে অঞ্চল সেখানেই রয়েছে মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাব। মোহনবাগান লেনের মুখেই আখড়া বাড়িতে ষোড়শ শতকে পদধূলি পড়েছিল শ্রীশ্রী চৈতন্যদেবের। সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস, কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী সুচিত্রা মিত্র, অভিনেতা ছবি বিশ্বাস, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরেশ্বর সেন একসময় বসবাস করেছেন এই  পাড়াতেই।

১৯১৭ সালে ১২ জন ইয়ার বা বন্ধুর উদ্যোগেই প্রথমবার বারোয়ারী দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়েছিল। শতবর্ষ পেরিয়েও এখনও সেরকম ভাবেই সাবেকিয়ানা বজায় রেখেছে মোহনবাগান বারোয়ারী।এলাকাবাসীর বক্তব্য বারোয়ারী পুজো হলেও সবাই এই পুজোকে নিজেদের বাড়ির পুজো বলেই মনে করেন। বছরের পর বছর ধরে একইরকম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছেন তাঁরা।মোহনবাগানের ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ড জয় যে কোনো বাঙালির কাছে ও বিশেষত স্বাধীনতাপ্রিয় ভারতীয়র কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মোহনবাগানের শিল্ড জয় শুধু ফুটবল খেলা ছিল না ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। গত ১০৭ বছর ধরে সেই একইভাবে বাঙালিয়ানা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেছে মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাব। মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাবের পুজোর বৈশিষ্ট্যই হল ঐতিহ্য মেনে ঘরোয়া পরিবেশে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন করা। দু’য়েক বছর ছাড়া মোহনবাগান বারোয়ারী ক্লাব সেই একই চালচিত্রের দুর্গা প্রতিমার সাবেকি ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। দেবী প্রতিমার সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও অধিকাংশ বছরই হয় উজ্জ্বল ডাকের সাজ অথবা স্নিগ্ধ শোলার সাজ। কোনোদিনই বারোয়ারীর দুর্গা প্রতিমার রণাঙ্গিনী রূপ হয় না। শান্ত স্নিগ্ধ মাতৃরূপের পুজো করা হয়।

Related Articles