
The Truth of Bengal,Mou basu: পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে বাদ্যি বাজতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রতি বছর সপরিবারে মর্ত্যে আসেন মা দুর্গা। স্বর্গের দেবীরূপে পূজিতা হলেও মা দুর্গা বাঙালির ঘরের মেয়ে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো অনন্য শিল্প সূষমা তুলে ধরারও মাধ্যম। প্রত্যেক বছর অনন্য নানান শিল্প থিমের মাধ্যমে তুলে ধরে ট্যাংরার ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এবার শিল্পের পাশাপাশি অঙ্গদানের মতো সামাজিক বার্তাও দিচ্ছে কলকাতার এই পুজো কমিটি। ১০৪তম বছরে ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এবারের থিম “দান”। অঙ্গদাতারাই সমাজের আসল নায়ক। অঙ্গদানের মতো সামাজিক বার্তা দিচ্ছে এই পুজো কমিটি।ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির কর্মকর্তা সমীর ঘোষ জানান, ” হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কড়িকাঠ গুনে দিন কাটে অনেক রোগীর। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রত্যাশায় দিন কাটে তাঁদের। কেউ অপেক্ষা করে থাকেন চোখের, কেউ কিডনি, কেউ লিভার, কেউ বা হাত পা প্রতিস্থাপনের প্রত্যাশায়। সময়মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা না হলে মলিন মুখগুলোকে আরো মলিনতর দেখায়।
দিন যায়, রাত যায়, মাস পেরিয়ে বছর ঘোরে-অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় না।অন্তহীন পাওয়ার আশা চলতেই থাকে। রক্তদান নিয়ে যে নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের সমাজে দেখা যায় তার সিকিভাগও অঙ্গদানের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অঙ্গদানের বিষয় আমরা এখনো কয়েক যোজন দূরে। অদ্ভুত এক মানসিকতা আমাদের। বিজ্ঞানের সাহায্যে বহু প্রতিবন্ধকতাকে দূর করেও এখনো বহুজনের মনের অন্ধ বিশ্বাস যে অঙ্গদানে পরজন্মে নাকি অঙ্গহানি হয়। এই অবাস্তব কল্পনাকে ভেঙে চুরমার করতে ১০৪তম বছরে আমাদের ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির নিবেদন, “মরণোত্তর অঙ্গদানে পূর্ণ হোক জীবনের জয়গান।” গোটা পৃথিবীর তুলনায় বাংলা এখনো অঙ্গদানে অনেক পেছনের সারিতে। অথচ পূরাণমতে, সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের শিরশ্ছেদের পর দেবাদিদেব মহাদেবদ্বারা হাতির মাথা লাগানোর কাহিনিই প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা। এবছর আমাদের মণ্ডপ একটি হাসপাতালের প্রতিরূপ হিসাবে তুলে ধরা হবে। মডেলের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটার, অস্ত্রোপচাররত ডাক্তার, রোগী, শয্যা, ওষুধ, ওষুধের দোকান ইত্যাদি তুলে ধরা হবে।
গ্রিন করিডরের মাধ্যমে আসা কোনো সহৃদয় পরিবারের দান করা চোখ দিয়ে এক দৃষ্টিহীন মেয়ের প্রথমবার দশভূজা দর্শনের এক অনাবিল আত্মতৃপ্তিও দেখানো হবে।”ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবের সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন থিম শিল্পী সম্রাট ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ট্যাংরা ঘোলপাড়ার পুজোয় আমি অঙ্গদানের মতো সামাজিক বার্তা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরছি। কারণ, আমাদের দেশে এখনো অঙ্গদান নিয়ে সেভাবে সচেতনতা নেই। অঙ্গদানের প্রতি সচেতনতা যাতে বাড়ে সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। মণ্ডপে প্রতীকী হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। আমরা জানি অঙ্গদাতার কাছ থেকে নেওয়া অঙ্গ অন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকা গ্রহীতার কাছে গ্রিন করিডর করে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেটা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। মডেলের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিমণ্ডল গড়ে তোলা হবে। হাসপাতালে যেখানে দেবতা থাকেন সেখানেই মাতৃপ্রতিমা থাকবে। ভিজ্যুয়াল এফেক্টের মাধ্যমে মডেলের সাহায্যে দেখানো হবে একটি দৃষ্টিহীন বাচ্চা মেয়ে অঙ্গদানের মাধ্যমে পাওয়া চোখ দিয়ে প্রথমবার দুর্গা দর্শন করছে। পুরোটাই ভাস্কর্যের মাধ্যমে দেখানো হবে। হাসপাতালের পরিমণ্ডলে চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে। থিমের আদলেই সামঞ্জস্য রেখে মায়ের সাবেকি সনাতনী রূপ। মা বসে আছেন, অভয় দিচ্ছেন এমন ভঙ্গিমা।”
Free Access