কলকাতা

পুজোয় এবার “ইচ্ছে”-রা ডানা মেলছে কাঁকুড়গাছি মিতালীতে

Durga Puja 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: প্রতি বছর নিত্য নতুন থিমে চমক দেয় উত্তর কলকাতার কাঁকুড়গাছি মিতালীর পুজো। ভিড়ে ঠাসা থাকে পুজো মণ্ডপ। এবছর পুজোয় কাঁকুড়গাছি মিতালীতে ” ইচ্ছে”-রা ডানা মেলবে। অনেক কিছুই জীবনে চাওয়ার থাকে আমাদের। কিন্তু প্রাপ্তির ঝুলি সামান্যই। জীবন খাতার প্রতিটি পাতায় এই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে মেলাতেই কেটে যায় গোটা জীবন। আমাদের মনের মাঝে কত কতই না ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির মতো। কিন্তু ক’জনেরই বা জীবনে সেই সব ইচ্ছে পূরণ হয়। সব ইচ্ছে বাস্তবায়িত হবে না জেনেও আমরা রোজ স্বপ্ন দেখি। অবিরাম ছুটে চলি সেই স্বপ্নের পেছনে। এমনই এক “ইচ্ছে”-র কাহিনি এবছর ৮৭তম বছরে তুলে ধরা হচ্ছে কাঁকুড়গাছি মিতালীর পুজোয়।পুজো কমিটির পক্ষ থেকে কর্মকর্তা নীলকমল পাল জানান, উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ওপর সপ্তাহের প্রতিদিন রাস্তার ২ পাশে ব্যবহৃত জামাকাপড়ের অস্থায়ী হাট বসে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত হাটে চলে বেচাকেনা। কিন্তু বর্তমানে রুচির পরিবর্তন ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি মানুষকে আজ হাটে বেচাকেনা বিমুখ করে তুলেছে।

তাই আগেকার সময়ের মতো আজকাল হাটে অত বিক্রিবাট্টা হয় না। হাটে আসা বিক্রেতাদের আর্থিক অবস্থাও তাই খুব একটা স্বচ্ছল নয়। যেমন এবার আমাদের পুজো মণ্ডপে তুলে ধরা হচ্ছে মিতেশ নামে এমনই এক পুরনো জামাকাপড়ের বিক্রেতার কথা। মিতেশের পূর্বপুরুষ বাংলার আদি বাসিন্দা নয়। কিন্তু পরিবারের বেশ কয়েক প্রজন্ম জন্মসূত্রে এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁরা এই পুরনো জামাকাপড় বেচাকেনার সঙ্গেও যুক্ত। রাতের অন্ধকারে মিতেশ দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনা পুরনো জামাকাপড়ের পসরা নিয়ে এসে রাস্তার ২ পাশে মজুত করে। রাতে ওই জামাকাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকার ওপর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে। তাঁর দু’চোখে নেমে আসে ঘুমঘোর। মনে মনে মিতেশ ভাবে সেও যদি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে মা দুর্গার আরাধনা করতে পারত। কিন্তু তাঁর মতো দিন আনি দিন খাই এক সামান্য গরিব মানুষের পক্ষে কি দুর্গাপুজোর মতো রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করা সম্ভব? ঘুমের মধ্যে এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মিতেশ স্বপ্ন দেখে।

স্বপ্নে সে দেখে কোনো এক বনেদি বাড়িতে পুজো হচ্ছে। আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে সে মা দুর্গার আরাধনা করছে। চারিদিকে কাঁসরঘণ্টা বাজছে। ঢাকের বাদ্যি বেজে উঠছে। সবাই উৎসবের আনন্দে গা ভাসিয়েছে। কিন্তু মিতেশ বাস্তবের আর্থিক অনটনের কারণে স্বপ্নে আসা ইচ্ছেকে পূরণ করতে পাচ্ছে না। সামান্য হাটের বিক্রেতা মিতেশ তাই স্বপ্নেই মায়ের পুজো করছে। কাল্পনিক এই ইচ্ছের কাহিনীই এবার তুলে ধরা হচ্ছে কাঁকুড়গাছি মিতালীর মণ্ডপে। সামগ্রিক ভাবনা ও সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী প্রশান্ত পাল।”শিল্পী প্রশান্ত পাল জানান, “কাঁকুড়গাছি মিতালীর পুজোর থিম ইচ্ছে। সাধারণত পুরনো জামাকাপড়ের হাট বিভিন্ন জায়গায় রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বসে রাস্তার ওপর। বিক্রেতারা রাত থেকে জামাকাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকা নিয়ে জড়ো হন। বিক্রেতাদের জীবনযাত্রা স্বচ্ছল নয়। পুজোয় এরকম বিক্রেতারা দেখেন নানা রকম জিনিসপত্র নিয়ে মণ্ডপ হচ্ছে। এরকম পুরনো জামাকাপড়ের বিক্রেতাদের ইচ্ছে তাঁদের জিনিস দিয়েও মণ্ডপ হোক। মণ্ডপে গোটা ইনস্টলেশনই ভাসমান হচ্ছে। স্ট্রাকচারাল পার্ট সবই ঝুলন্ত হবে। পুরনো জামাকাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জায়। বনেদি বাড়ির একচালার সাবেকি সনাতনী ঠাকুর হবে।”

Free Access

Related Articles