স্বাস্থ্যে আজ সেরা বাংলা: মুখ্যমন্ত্রী
Bengal is the best in terms of health today: Chief Minister

Truth Of Bengal: জয় চক্রবর্তী: ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’ বলে স্লোগান তুলেছে বিজেপি। মেরুকরণের এই স্লোগানকে জবাব দিতে বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলে বেড়াচ্ছে হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, তারা কি একবারও খোঁজ নিতে যাচ্ছে বিহার, ত্রিপুরা বা উত্তর পূর্ব থেকে মানুষ এসে বাংলায় চিকিৎসা করাচ্ছে। বাংলা সবাইকেই আপন করে নেয়।
তবে অন্য জায়গা থেকে কেন বাঙালিদের তাড়ানো হয়?’ বুধবার রাজ্য বিধানসভায় এভাবেই উষ্মাপ্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিভাজন ও বঞ্চনার রাজনীতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ তৈরি হচ্ছে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য।’
রাজ্য বাজেটের বর্ধিত অধিবেশন চলছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক বাজেট আলোচনায় বুধবার অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি স্বাস্থ্যে আজ বাংলা দেশের সেরা।’ ইতিমধ্যেই ১৪ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার খরচ হয়েছে বলে বিধানসভার অধিবেশনে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলার আগে স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তথ্য সহকারে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল তুলে ধরেন।
বর্তমান আমলে রাজ্যে স্বাস্থ্যে যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে সে কথা অস্বীকার করতে পারে না বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যের কতগুলি প্যারামিটার থাকে। আমার দল যখন বিরোধী ছিল, তখন দেখতাম হাসপাতালের ঢোকার গেটগুলি ছোট ছোট। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইঁদুর-বিড়াল ঘুরে বেড়াতো। আজকে হয়তো কিছু জায়গায় হয়। তবে এখন আর সব জায়গায় হয় না।’ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ যে নজির তৈরি করেছে তা আরও একবার বিধানসভা অধিবেশনে জানলেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। তার পর থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। কেন্দ্রের চালু করা আয়ুষ্মান প্রকল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত সবার জন্য নয়। গাড়ি, বাড়ি, মোবাইল থাকলে পাওয়া যায় না সম্ভবত। কিন্তু স্বাস্থ্য সাথী সমস্ত মানুষের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য সাথীর পরিষেবা পেয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় এক কোটি মানুষ স্বাস্থ্য সাথীর সেবা পেয়েছে।’ ক্যান্সারের সম্পর্কেও রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্টেট অফ আর্ট ক্যান্সার সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। একটা এসএসকেএম এবং অন্যটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে।’ বুধবার অধিবেশনে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিছুদিন আগেই কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে চিকিৎসকদের সঙ্গে মেগা বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। বুধবার অধিবেশনে চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যে উঠে আসে আরজি কর। বলেন, ‘আমরা চাই আরজি করের মেয়েটি বিচার পাক।’
অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন পরিষেবা নিয়ে সমালোচনা করে। এমনকী বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে যাতে যাতে টাকা আটকে যায় তার জন্য সচেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে বিরোধী নেতারা। একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সমস্ত বিষয়গুলি নজরে রেখে মানুষ এর যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে বলে অধিবেশনে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন হবে রাজ্যে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি মানুষের মধ্যে যাতে আরও বেশি প্রচার করা যায় তার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথাও তুলে ধরতে হবে। সব থেকে বড় কথা, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্যই চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন রয়েছে বলে আরও একবার অধিবেশনে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানুষকে বর্তমানে ব্যাঙ্কের সুদের বেড়াজালে বেঁধে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ব্যাঙ্কের লোন একদিন দিতে দেরি হলেই বিপুল পরিমাণ সুদের হার বসিয়ে দিচ্ছে। মানুষ প্রবল অসুবিধায় রয়েছে।’ পাশাপাশি জিএসটি সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘হিরের ওপর জিএসটি নেই। অথচ আমাদের জিরের ওপর জিএসটি রয়েছে।’
সফল ভাবে পৃথিবীতে ফিরেছেন সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহযোগীরা। সুনীতাকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে, ‘সুনীতা উইলিয়ামস-সহ সবাই সুস্থ ভাবে ফিরেছে এবং তার ফেরার জন্য যারা ভূমিকা পালন করেছে আমি এই মহতী সদন থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’