মিশরের মমি থেকে টিপু সুলতানের তরোয়াল শোভা বর্ধন করে চলেছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের
Tipu Sultan's sword from an Egyptian mummy continues to grace the British Museum

Truth Of Bengal: ইতিহাস আর আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে চলে লন্ডনে। গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন নানা সৌধ যেমন শহরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনই আধুনিক প্রজন্মের এমন অনেক কিছু আছে যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। অল্প সময়ে লন্ডন দেখে শেষ করা যায় না। হাতে কয়েকদিন সময় থাকলে দেখে নেওয়া যায় সব কিছু।
তবে সামান্য কয়েকদিনের লন্ডন সফরে যে সব জায়গাগুলি না দেখলেই নয় তার মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ মিউজিয়াম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘরগুলির মধ্যে অন্যতম। নানা সময় কালের পৃথিবীর মানুষের সংস্কৃতির প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ নিদর্শন সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। ভাবা যায়! এত নিদর্শন বিশ্বের আর কোনও জাদুঘরে আছে কিনা সন্দেহ আছে।
ব্রিটিশ মিউজিয়াম এমন এক সংগ্রহশালা যেখানে কার্যত গোটা বিশ্বের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। কী নেই এখানে? এই জাদুঘরে ঢুকলে আপনি ভুলে যাবেন যে মিশর এসেছেন না গ্রিস? রোমে, চিন নাকি প্রাচীন ভারত— তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে।
প্রাথমিক ঘোর কাটিয়ে দেখতে শুরু করুন সংগ্রহগুলি। হাজার বছরের পুরনো মিশরীয় রাজাদের মমি দেখতে পাবেন কত সযত্নে এখানে রাখা আছে। একদিকে রাখা আছে দক্ষিণ এশিয়ার নিদর্শন। সেখানে বিশেষ নজর কাড়ে টিপু সুলতানের সেই বিখ্যাত তরোয়াল-সহ আরও অনেক কিছু।
ব্রিটিশ মিউজিয়াম স্থাপিত হয় ১৭৫৩ সালে। শুরুতে পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স স্লোয়েনের সংগৃহীত জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করে এই জাদুঘরটি গড়ে ওঠে। স্যার হ্যান্স ৭১ হাজারের বেশি বস্তুসামগ্রী সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন জাদুঘরটিতে। যার মধ্যে ছিল ৪০ হাজারের বেশি বই, ৭ হাজার পাণ্ডুলিপি, ৩৩৭ প্রজাতির উদ্ভিদ দেহাবশেষ। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে সমৃদ্ধ হয় ব্রিটিশ মিউজিয়াম। সেই প্রক্রিয়া এখন অব্যাহত। এখনও নানা সংগ্রহে সমৃদ্ধ হয়েই চলেছে জাদুঘরটি।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিভিন্ন সংগ্রহ সম্পর্কে জানতে দর্শনার্থীদের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। যেমন ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লে, ডিজিটাল গাইড, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সংগ্রহগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। সংগ্রহগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, যেমন ছবি, ভিডিয়ো এবং অডিয়ো ক্লিপগুলি ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হয়। কিছু সংগ্রহ ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়, যা দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। যে অ্যাপে দর্শকরা মিউজিয়ামের সংগ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, মিউজিয়ামের মানচিত্র এবং অন্যান্য সব কিছু জানতে পারেন।
বিরাট ঐতিহ্যশালী এই মিউজিয়ামে কঠোর নিরাপত্তাবলয় থাকলেও এখান থেকে নানা সময়ে অনেক কিছু চুরি হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতক থেকে উনিশ শতকের মধ্যে প্রায় দুই হাজার শিল্প সামগ্রী চুরি হয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে। এখান থেকে চুরি যাওয়া সেই সব শিল্প সামগ্রী বিভিন্ন অনলাইন বেচাকেনার সাইটে বিকোচ্ছিল। সেগুলিকে চিহ্নিত করে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থান পাওয়া নিদর্শনগুলির সব যে সঠিক উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল, তেমনটা বলেন না জাদুঘর বিশেষজ্ঞরা। একটা সময় বিশ্বের বহু দেশ শাসন করেছিল ব্রিটিশরা। সেই সময় সেই সব দেশ থেকে নানান সামগ্রী তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটেনে। যার মধ্যে বহু জিনিস এখন শোভা পাচ্ছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া তেমনই অনেক নিদর্শন শোভা বাড়িয়ে চলেছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের।