আন্তর্জাতিক

বলবেন মুখ্যমন্ত্রী শুনবে গোটা বিশ্ব

The whole world will listen to the Chief Minister's statement.

রাজাময় মুখোপাধ্যায়, লন্ডন( মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা দেবেন অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে। তাঁর সেই বক্তৃতা ঘিরে চর্চা তুঙ্গে লন্ডনে। বৃহস্পতিবার লন্ডনের সময় বিকেল পাঁচটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন কেলগ কলেজের সভাপতি অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং এই কলেজেরই ‘ফেলো’ তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি লর্ড করণ বিলিমোরিয়া। বিশেষ এই মুহূর্তে উপস্থিত থাকবেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজের সেই বহু আলোচিত অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘সামাজিক উন্নয়ন– বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’। কেলগ কলেজ আজকের আলোচনা ও বক্তৃতা সভায় প্রবেশ অবাধ বলে জানা যাচ্ছে। তবে আগে সংরক্ষণ করতে হয়। জানা যাচ্ছে আসন সংখ্যা ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এখন অনেকেই আবেদন করছেন দর্শকাসনে থাকার জন্য। অনলাইনে কলেজের তরফে বক্তৃতা সভার ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতা নিয়ে এখন উদ্দীপনা তুঙ্গে।

মুখ্যমন্ত্রীর আজকের বক্তৃতায় উঠে আসবে বাংলার কথা। তাঁর হাত ধরে কী ভাবে বদল হয়েছে বাংলায়, কীভাবে নারী ক্ষমতায়ন বেড়েছে সেই কথা বলতে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের কথা উঠে আসবে। মেয়েদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই যে প্রকল্প চালু করেছেন, তা আজ সমাদৃত হচ্ছে গোটা দেশের পাশাপাশি বিশ্বে। স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকোও। মুখ্যমন্ত্রীর এই সুদূরপ্রসারী ভাবনায় আজ স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে মেয়েদের। মেয়েদের স্কুলে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যা যা করেছেন তা এতদিন করতে দেখা যায়নি কোনও সরকারকে।

সেই সঙ্গে নারী ক্ষমতায়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। সরকারের তরফে মহিলাদের হাতে এখন প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে মহিলারা এখন  আর খুব একটা পর নির্ভর নন। টাটা প্রয়োজনে নিজের খরচের কিছুটা করতে পারছেন সরকারের দেওয়া টাকায়। আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ব্যাপক প্রসার রাজ্যে। যা নিরন্তরভাবে করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে রাজ্যে মহিলাদের উন্নয়নে এই যে ইতিবাচিক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা উঠে আসতে পারে তাঁর বক্তৃতায়।

বাংলার এই কথা আজ উঠে আসবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়। এমন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী আজ বক্তৃতা দেবেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বে কুলীন হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০ শতাব্দী ধরে শিক্ষার প্রবাহমান ধারা বয়ে চলা বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে আজ বাংলার কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই কথা শুনবে বিশ্ব। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতা নিয়ে ইতিমধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে লন্ডনের পড়ুয়াদের মধ্যে। তাঁরা সামনে থেকে শুনতে চাল মুখ্যমন্ত্রীর কথা। তাঁরা জানতে চান, কী ভাবে সঠিক নেতৃত্বদানের মধ্যে দিয়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে অনুষ্ঠানের শিরোনাম- ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’। যেখানে মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের আমলে বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে। কথা হবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রাজ্য সরকারি প্রকল্প ও পরিষেবা নিয়ে।

উল্লেখ্য, বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঙ্গলবার লন্ডনে শিল্প বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিলেতে বাংলার ইতিবাচক শিল্পবান্ধব দিক তুলে ধরে শিল্পপতিদের কাছে বিনিয়োগের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে শিল্পবান্ধব পরিবেশ থেকে পরিকাঠামোর লক্ষ্যণীয় উন্নতি হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণ করতে সিনার্জি কমিটি গঠন-সহ একগুচ্ছ বিষয় ব্রিটেনের শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি বছরে রাজ্যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ২০টি পার্টনার কান্ট্রির মধ্যে অন্যতম ছিল ব্রিটেন। রাজ্যে সেই বাণিজ্য সম্মেলনের পর ব্রিটেনে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য সম্পর্ক পোক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।

কত দ্রুততার সঙ্গে শিল্পপতিদের লগ্নি প্রস্তাব কার্যকর করা হচ্ছে তার ইতিবাচক দিক বিলেতের সভায় উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাও ব্রিটেনের মধ্যে কোনও দেওয়াল নেই। শিল্প-বাণিজ্য-সমাজকল্যাণের জন্য কোনও দেওয়াল থাকা উচিত নয়।’ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন বাংলা মানেই বাণিজ্য। তিনি খতিয়ান দেন, বাংলার অগ্রগতির জন্য ৯৪টি প্রকল্প চলছে। বাংলায় ৪৬শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। জমির সমস্যা মিটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ম্যান সিটির জার্সি উপহার দেওয়া হয়।

এদিন, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ও টেকনো ইন্ডিয়ার মধ্যে মউ স্বাক্ষর হয়। ফের কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান পরিষেবার আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ‘আগে এই বিমান পরিষেবা ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কেন জানি না। তবে এখন বিমানের সমস্ত আসন ভর্তি থাকে। এই পরিষেবা চালু করলে আপনাদের ব্যবসা বাড়বে। আমরা জ্বালানিতে ছাড় দিয়ে। যারা প্রথম এগিয়ে আসবে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

আপনারা আসুন আপনাদের অভ্যর্থনা জানাব।’ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যে সূর দেখা দেখা গিয়েছিল, সেই সূরের প্রতিধ্বনিত হয় লন্ডনে। শিল্পপতিদের পাশাপাশি বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ‘আপনারা আসুন, বাংলার বিনিয়োগ করুন। বাংলা আপানাদের খালি হাতে ফেরাবে না’। এই বার্তা দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে।মঙ্গলবার শিল্প বৈঠকের পর আজ অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে বক্তৃতা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Related Articles