
The Truth of Bengal: অন্ধকার রাতে একটা পাতা পড়লেও জেগে ওঠে ওরা। তাদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে কুম্ভকর্ণেরও। তাদের সজাগ কর্মক্ষমতার জন্য ব্রাজিল পুলিশে একমাত্র ভরসা এখন রাজহাঁস। উঁচু নিশ্ছিদ্র দেওয়াল। সেখান থেকে মাছি গলাও দুঃসাধ্য। গগণ চুম্বি ঘেরাটোপের বাইরে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। আর সেই মাঠে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দল রাজহাঁস। ব্রাজিলের সাও পেদ্রো দে অ্যালকান্তারা জেলের বাইরের ছবিটা ঠিক এমনই। সেখানে জেল পাহারা দেয় রাজহাঁসের দল। তারাই জেলের চৌকিদার। ব্রাজিলের এই বিশেষ জেলটিতে কিন্তু এত দিন রাজহাঁস ছিল না। পাহারাদার হিসাবে ছিল প্রশিক্ষিত হিংস্র কুকুর। সম্প্রতি তাদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে জেল কর্তৃপক্ষ কুকুরের বদলে রাজহাঁসে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বেশি দেখেছেন। রাজহাঁস গুলি রাখার সুবিধাগুলি বিবেচনা করেই তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই রদবদল করেছেন। দক্ষিণ ব্রাজিলের সান্টা ক্যাটারিনা প্রদেশে রয়েছে সাও পেদ্রো দে অ্যালকান্তারা কারাগার। এলাকাটি অত্যন্ত নির্জন। ওই নির্জন এলাকা হাঁসের পক্ষে উপযোগী বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।
ব্রাজিলের ওই জেলের কর্মচারীদের দাবি, কুকুরের চেয়ে রাজহাঁসের মধ্যে পাহারা দেওয়ার পারদর্শিতা, তৎপরতা অনেক বেশি। জেলের ডিরেক্টর মার্কোস রবার্টো ডিসুজা জানিয়েছেন, তাঁদের জেলে তিনটি স্তরে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রয়েছে। কয়েদিরা যাতে জেল থেকে পালাতে না পারেন, তার জন্য চলে কড়া নজরদারি। জেলটিতে প্রথমে রয়েছে বৈদ্যুতিন নিরাপত্তার জাল। তা পেরোতে পারলে রয়েছে মানুষের নিরাপত্তা। অর্থাৎ, জেলের নিরাপত্তারক্ষীরা কড়া নজর রাখেন কয়েদিদের উপর। এর পরের ধাপেই রয়েছে রাজহাঁসের নজরদারি। কর্তৃপক্ষের মতে, তৃতীয় ধাপের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই সবচেয়ে জোরদার। পাহারাদার রাজহাঁসেদের নেতৃত্ব দেয় পিউ-পিউ। ধবধবে সাদা পালকের ওই রাজহাঁসটির তৎপরতা যেন অন্যদের চেয়ে খানিক বেশি।
ডাকলে সবার আগে সে-ই সাড়া দেয়। কুকুরের পরিবর্তে জেলে রাজহাঁস নিয়ে আসার অন্যতম কারণ অবশ্য অর্থনৈতি। কুকুর পরিচর্যায় যে পরিমাণ খরচ হয়, তার চেয়ে রাজহাঁসদের দেখাশোনার খরচ অনেক কম। পাহারাদার হিসাবে রাজহাঁসের ভূমিকা অনেক পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই এই পাখিগুলিকে বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্রাজিলের জেলে ফিরেছে সেই প্রাচীন রীতি। রাজহাঁস পাহারা দেওয়ার কাজে অনেক বেশি পারদর্শী। স্বভাবগত ভাবেই তারা রক্ষণশীল ও প্রতিরক্ষামূলক। মানুষের চেয়ে পাখিদের দৃষ্টিশক্তি অনেক বেশি। অতিবেগুনি রশ্মিও তারা দেখতে পায়। রাজহাঁসের ডাক অত্যন্ত জোরালো। রাজহাঁসেরা স্বভাবগত ভাবে প্রতিক্রিয়াশীল। তারা যা দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে, তাতে চিৎকার করে, ডানা ঝাপটিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। রাজহাঁসের এই নানা ইতিবাচক দিকের কথা মাথায় রেখে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে ব্রাজিলের জেলে।