মোদি-পুতিন বৈঠক, রুশ-সেনাবাহিনীতে যুক্ত ভারতীয়দের ছাড় দেবে রাশিয়া
Modi-Putin meeting, Russia will exempt Indians joining the Russian-Army

The Truth Of Bengal : দু’দিনের রাশিয়া সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর এই রাশিয়া সফরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনার মধ্য দিয়ে রুশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয়দের জন্য বিশেষ দরজা খুলে গেল। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যেসব ভারতীয় রয়েছেন তাদের জন্য বিশেষ ছাড় দিতে চলেছে রুশ সরকার। সূত্রের খবর, রাশিয়া রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রত্যার্পণের বিষয়ে কথা বলেন। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভারতীয় সেনাদের ছেড়ে দেওয়ার ও প্রত্যার্পণের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে চলা যুদ্ধে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অনেক ভারতীয় সেনা। এই যুদ্ধে দুই ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। তারপরেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে তাদের ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়। সেই আবেদন মেনে নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
রুশ বাহিনীতে প্রতারিত ভারতীয়রা :
অনেকদিন ধরেই ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে ভারতীয় সেনাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছিল। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই নিয়ে বেশ কয়েকবার তদ্বির করেন। গত ৪ জুলাই একইভাবে রাশিয়ার কাছে ভারত এই দাবি জানায়। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলনেও এই দাবি জানানো হয় ভারতের পক্ষ থেকে।
রাশিয়া ওই ইউক্রেনের মধ্যে টানা যুদ্ধ চলছে। ভারতের পক্ষ থেকে আগেই দাবি করা হয়েছিল এই যুদ্ধে দুই ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকা সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। এমনও অভিযোগ ওঠে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকা অনেক ভারতীয়দের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যুদ্ধে যুক্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্য কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতীয় নাগরিকদের ব্যবহার অনৈতিক বলে দাবি করা হয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। এই নিয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চালাচ্ছিল। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে সহায়তা কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন এমন দশজন ভারতে ফিরে এসেছেন আগেই। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ২০ জনকে বাধ্য করা হয়েছে। লোভনীয় চাকরির অজুহাত দেখিয়ে তাদের যুদ্ধে নামতে বাধ্য করা হয়।
মোদি-পুতিন বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা :
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া সফরে এই বিষয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নভো-ওগারিওভোতে রাশিয়া রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠক হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক হতে চলেছে। দু’দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে আসার সম্ভাবনা। তার মধ্যে যেমন অর্থনৈতিক বিষয় থাকবে পাশাপাশি সামাজিক এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে থাকবে। শক্তি ও বাণিজ্যের বিষয়গুলিও আলোচনায় উঠে আসার সম্ভাবনা। মনে করা হচ্ছে এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোকাস অর্থনৈতিক এজেন্ডা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে বার্ষিক এই শীর্ষ সম্মেলনে দু’দেশের কৌশলগত একাধিক বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এখনো পর্যন্ত ভারতের রাশিয়ার মধ্যে ২১ টি বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর দু’দেশের মধ্যে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের ইউক্রেন সম্পর্কিত অবস্থান :
এদিনের এই বৈঠক থেকে ইউক্রেন নিয়ে ভারতের অবস্থান রাশিয়ার সামনে স্পষ্ট করতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারের উপর প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের অবসানের উপর জোর দিয়েছে ভারত। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তা বজায় থাকবে। কূটনৈতিক আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে সংঘাতের সমাধান চাই ভারত। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে একটা সমাধান সূত্র খুঁজতে চাই ভারত। ভারতের দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গি হল আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যা ও সমস্ত মতবিরোধ মিটে যাক।