আন্তর্জাতিকস্বাস্থ্য

চীনের খামারের পশু থেকে মিলল ১০০টি ভাইরাস! মানুষের জন্য বিপদজনক অন্তত ৪০ টি

100 viruses found in Chinese farm animals! At least 40 are dangerous for humans

Truth Of Bengal : চীন মানেই হল ভাইরাসের আঁতুড়ঘর। করোনা থেকে শুরু করে নানান মারণ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হল চীন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় চীনের পশম খামার থেকে প্রাণীদের মধ্যে সঞ্চালিত ১২৫ টি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। যা অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের শরীরে। এই পর্যবেক্ষণটি চীনা গবেষকদের নেতৃত্বে প্রকাশে এনেছেন বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এডওয়ার্ড হোমসের সহ লেখক। তিনি পশম খামার থেকে হরি হরি মদ করে অবতরণ এই ভাইরাসের উৎপত্তি নিশ্চিত করেছেন।

নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। এটি রোগে মারা যাওয়া ৪৬১ টি প্রাণীর ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। শেয়াল, র‍্যাকুন কুকুর, খরগোশ এবং মাসক্র্যাট সহ আরো বেশ কিছু প্রাণীরা বিভিন্ন রোগে মারা গিয়েছে। এই গবেষণায় আরো প্রায় ৫০ টি বন্যপ্রাণী ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। শনাক্ত করা ভাইরাসগুলির মধ্যে ছিল হেপাটাইটিস ই এবং জাপানি জ এনসেফেলাইটিস এর মত অতি পরিচিত প্যাথোজেন। এছাড়াও ১৩ টি নতুন ভাইরাস রয়েছে যা পশম খামার গুলির মাধ্যমে প্রাণীদের দেহের সংক্রমিত হচ্ছে।

এডওয়ার্ড হোমস হলেন একজন ভাইরোলজিস্ট। তিনি সক্রিয়ভাবে প্রাণীদের মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি সম্প্রতি ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে পশম চাষ শিল্পের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এডওয়ার্ড জানিয়েছেন, ” ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিশ্বব্যাপী দশম চাষ শিল্প বন্ধ করা উচিত।” ভবিষ্যতে আর কোন ভাইরাস যাতে প্রাণীদের উপর আক্রমণ করতে না পারে তার জন্যেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানী।

গবেষণায় সনাক্ত করা উল্লেখযোগ্য একটি ভাইরাস হল পিপিস্ট্রেলাস ব্যাট এইচকেইউ-5 এর মত ভাইরাস। এই ভাইরাসটি আগে বাদুরের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। এই ভাইরাসটি মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিনড্রোম করোনাভাইরাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ইহা মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এডওয়ার্ড জানিয়েছিলেন, এই ভাইরাসটিও পরবর্তীকালে মানুষের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে তাই ভাইরাসটি অবিলম্বে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

ভাইরাস ট্রান্সমিশন হাব হিসাবে পশম খামার

মানুষ এবং পশুদের মধ্যে সংক্রমিত এই ভাইরাসগুলি বিভিন্ন পশম খামারগুলি থেকে উৎপত্তিলাভ করে। বিভিন্ন গবেষকেরা গিনিপিগ, মিঙ্কস এবং মাস্ক্রেট এর মত প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বার্ড ফ্লুর প্রমাণ পেয়েছেন। গবেষকের দল এই প্রাণীদের মধ্যে মোট সাত ধরনের করোনা ভাইরাস সনাক্ত করেছেন।

র‍্যাকুন কুকুর এবং মিঙ্ককে সবচেয়ে বেশি বিপদজনক ভাইরাস বহনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমীক্ষা অনুসারে জানা যায়, এই ধরনের প্রাণীরা ভাইরাসকে আশ্রয় দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এটি কোন মানুষ ব্যবহার করলে তার শরীরে সংক্রমণ হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী দশম চাষ ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এক্ষেত্রে বিশ্বের পশম উৎপাদনে চীন প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমিকা পালন করে। ২০২১ সালে চীন আনুমানিক ২৭ মিলিয়ন প্রাণী থেকে পেল্ট তৈরি করেছিল। যার বেশিরভাগই বিলাসবহুল পোশাকে পরিণত হয়েছিল।

গ্লোবাল অ্যাকশনের জন্য জরুরী প্রয়োজন:

এশিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় যেহেতু দিন দিন পশম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে মহামারী প্রতিরোধে ওপর নজরদারি চালাতে আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় গবেষকরা পশমের খামারে থাকা বাইরের আক্রান্ত প্রাণীদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

Related Articles