দেশ

জানেন কী এমডিএইচ, এভারেস্টের মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোন রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে?

Which Cancer-Causing Chemical Was Found Amid MDH, Everest Row?

The Truth of Bengal: ভারতের অন্যতম মসলার ব্র্যান্ড এমডিএইচ এবং এভারেস্ট বর্তমানে স্ক্যানারে রয়েছে।মূলতঃ হংকং ও সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের ইথিলিন অক্সাইডের উপকরণ থাকার অভিযোগে তাঁদের কিছু মশলা প্রত্যাহার করতে হয়। দেশের  সর্বোচ্চ খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অফ অথরিটি ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই), রাজ্যগুলিকে গুণমান পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন মশলার নমুনা সংগ্রহ করতে বলে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করছে,ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সসাইড থাকায় তাতে ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।তারপরই এমডিএইচ এবং এভারেস্ট-এর বেশ কয়েকটি পণ্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়।

সিঙ্গাপুর, হংকং এ মসলার ব্রান্ড প্রত্যাহার রাসায়নিক উপকরণ যুক্ত থাকার ঘটনায় বড়সড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।হংকং এ  চারটি মশলার মিশ্রণ প্রত্যাহার করা হয়েছে – এমডিএইচের ‘মাদ্রাজ কারি পাউডার’, ‘সম্ভার মশলা পাউডার’ এবং ‘কারি পাউডার’ এবং এভারেস্ট গ্রুপের ‘ফিশ কারি মশলা’। হংকংয়ের সেন্টার ফর ফুড সেফটির  খাদ্য এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যবিধি বিভাগ এপ্রিলের শুরুতে তার ওয়েবসাইটে জানায়। “তারা নিয়মিত খাদ্য নজরদারির অঙ্গ হিসেবে এবংপরীক্ষার জন্য সিম শা সুইয়ের তিনটি খুচরা আউটলেট থেকে উপরে উল্লিখিত নমুনা সংগ্রহ করেছে। কার্যক্রম পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে নমুনায় একটি কীটনাশক, ইথিলিন অক্সাইড রয়েছে। সিএফএস  বেনিয়ম সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিক্রেতাদের জানিয়েছে, তাদের বিক্রয় বন্ধ করতে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পণ্যগুলিকে  বিক্রিয়ের জায়গা থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।

ইথিলিন অক্সাইড সম্পর্কে আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে রাসায়নিকটিকে ক্যান্সারের গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি এভারেস্টের ফিশ কারি মসালাও ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। ” নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া” মাত্রার থেকে বেশি সময়  ইথিলিন অক্সাইড খুঁজে পাওয়ার পর তৈরি হয় আশঙ্কা। নিয়ন্ত্রক মশলা আমদানিকারক এসপি মুথিয়া অ্যান্ড সন্সকে তারা পণ্যটি বাজার থেকে তুলে নিতে বলে।“ইথিলিন অক্সাইড একটি কীটনাশক যা খাবারে ব্যবহারের করা যায় না। এটি জীবাণু দূষণ প্রতিরোধ করতে   ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষি পণ্য হিসেবেও কাজে লাগানো যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের খাদ্য সংস্থান বিধির  অধীনে, মশলা জীবাণুমুক্ত করার জন্য ইথিলিন অক্সাইড ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, “এসএফএ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে  এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এভারেস্টের  প্রতিক্রিয়া

এভারেস্ট ফুড প্রোডাক্ট প্রাইভেট বিতর্কে আরও জানা গেছে,  হংকং এবং সিঙ্গাপুরে এর মশলা নিষিদ্ধ করা হয়নি। “সিঙ্গাপুর এবং হংকং-এ এভারেস্ট নিষিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তবে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে এটি সঠিক নয়।  কোনো দেশেই এভারেস্টের উত্পাদিত সামগ্রী নিষিদ্ধ নয়। ৬০টি এভারেস্ট সামগ্রীর মধ্যে শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়।

এফএসএসআই মসলার নমুনা পরীক্ষা 

এদিকে জানা গেছে,হংকং ও সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পথে। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অফ অথরিটি ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে,দেশের সমস্ত উত্পাদন কেন্দ্র থেকে  মসলার নমুনা তারা সংগ্রহ করতে চায়।এবিষয়ে সংস্থার তরফে আরাও জানানো হয়েছে,দেশের ফুড কমিশনারদের সতর্ক করা হয়েছে।এরমধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমেও প়ড়তে চায় তাঁরা। আগামী ৩-৪দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।অন্ততঃ ২০দিন পর এই ল্যাব রিপোর্ট পরিস্কার হতে পারে। মূলতঃ এই মশলায় ইথিলিন অক্সসাইড আছে কিনা তাই খতিয়ে দেখতে চায়   ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অফ অথরিটি ইন্ডিয়া। সূত্রের খবর ইথিলিন অক্সসাইড খাদ্যে মেশানো পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে যদি ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

 ইথিলিন অক্সসাইডের উপরকরণ ও ব্যবহার

 ইথিলিন অক্সাইড হল একটি বর্ণহীন, দাহ্য গ্যাস যা ঘরের তাপমাত্রায় মিষ্টি গন্ধযুক্ত। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্য   অনুসারে এটি প্রধানত  এটি ইথিলিন গাইকোলিন সহ নানা ক্ষতিকারক উপাদানের জন্ম দিতে পারে।এটি টেক্সটাইল, ডিটারজেন্ট, পলিউরেথেন ফোম, ওষুধ, আঠালো এবং দ্রাবক তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। ই-কলি এবং সালমোলেনা-এর মতো জীবাণু দূষণ রোধ করতে খাদ্য মশলার জন্য ইথিলিন অক্সাইড একটি ধূমপান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।এটি ডিএনএকে ক্ষতি করতে পারে যা এটিকে একটি “কার্যকরী নির্বীজন এজেন্ট” করে তোলে। এনসিআই  তথ্য অনুসারে একথা বলা যায়। রাসায়নিক অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে হাসপাতালে এই ইথিলিন অক্সসাইড ব্যবহার করা হয়। দূষিত বায়ু শ্বাস নেওয়া বা ধূমপান তামাক দ্বারা মানুষ রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে পারে। ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি অনুসারে, রাসায়নিকের ধোঁয়া বা উৎপাদনের সঙ্গে  জড়িত কর্মীরাও ইথিলিন অক্সাইডের সংস্পর্শে এলে তা ক্ষতি করে।