দেশ

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মঞ্চে প্রতুলকে শ্রদ্ধা

Tribute to Pratul on International Language Day stage

Truth Of Bengal: জয় চক্রবর্তী: ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে আলাদা মর্যাদায় পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।‌ দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে অমর একুশে শহিদ বেদি তৈরি করে প্রতিবছর সেখানেই শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।‌ এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না।‌

তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করলেন সদ্য প্রয়াত সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে। মঞ্চে প্রয়াত শিল্পীর ছবি রাখা হয়েছিল।‌ সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত শিল্পীকে।‌ প্রয়াত শিল্পীর অর্ধাঙ্গিনী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতুলদা না থেকেও আমাদের মধ্যে থেকে গিয়েছেন। উনি চলে গিয়েছেন কিন্তু তাঁর গান ‘আমি বাংলার গান গাই..’ আমাদের মধ্যে রয়ে গেল।’ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের সরকারি মঞ্চ থেকে প্রয়াত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জানান, ‘আমি শেষবার প্রথম দার সঙ্গে দেখা করেছিলাম তাঁর মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগে। আমি গিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। আমি গিয়ে বললাম প্রতুলদা আমি মমতা। দেখলাম প্রতুল দার চোখের জল।

আমি বলেছিলাম আপনাকে তো আবার গাইতে হবে। কিন্তু হয়তো উনি বুঝতে পেরেছিলেন উনি আর থাকবেন না।’ প্রয়াত সংগীতশিল্পীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল। তাই আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের সরকারি মঞ্চ থেকে প্রয়াত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে অনুষ্ঠানে হাজির সবার কোথাও যেন মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।

ভাষা দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে ভাষায় কথা বলি, সেটাই আমাদের মাতৃভাষা। তার প্রতি আমাদের আলাদা সেন্টিমেন্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা অনেক ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি।’ মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার আগে চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরি, সাহিত্যিক আবুল বাশার-সহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। স্বভাবতই উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। আবুল বাশারের মতে, ‘বাংলাদেশ যেন মনে হচ্ছে উদ্ভ্রান্ত। নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলেছে।’ আবার যোগেন চৌধুরির মতে, ‘বর্তমান বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য গড়তে আগ্রহী। এরপর বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি কোন পথে যাবে তা বলা কঠিন।’

একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ স্মৃতি।‌ একটা দেশ ভাষাকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার আন্দোলনে লড়াই করেছিল। সেই বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অবস্থা বেশ টালমাটাল। প্রায় অনাড়ম্বর ভাবেই বাংলাদেশে পালিত হয়েছে ভাষা শহিদ দিবস। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনও দেশ সম্বন্ধে কোনও কথা আমাদের বলা উচিত নয়। আমরা আমাদের দেশ সম্পর্কে বলবো। বাংলা ভাষা এখন ধ্রুপদী ভাষায় স্বীকৃতি পেয়েছে।’ এবিষয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশংসা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মঞ্চ হয়ে উঠেছিল প্রতুলময়।

সদ্য প্রয়াত শিল্পীকে নিয়ে শ্রীজাত নতুন কবিতা পাঠ করেন। জয় গোস্বামী শ্রদ্ধা জানান কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘বাংলা’ কবিতাটি পাঠ করে। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী ইমন চট্টোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর বাগচী, শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান শেষ হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা ‘শান্তি’ নামক কবিতা দিয়ে। বক্তৃতা শেষে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের কবিতা পাঠ করেন।

Related Articles