দেশ

আমাদের দেশেই আছে এক ব্যতিক্রমী মন্দির যেখানে ভগবান রূপে পূজিত হয় পাঠ্যবই!

There is an exceptional temple in our country where textbooks are worshiped as God

Truth of Bengal: কেরলের উত্তর প্রান্তে কন্নুর জেলার চেরুপুজ়ার কাছে অবস্থিত প্রাপোয়িল গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক অভিনব মন্দির— ‘নবপুরম মথথিথা দেবালয়ম’। এই মন্দিরের স্থাপত্য অন্যান্য মন্দিরের মতোই পাথরের প্রকাণ্ড গঠন। তবে, এখানেই রয়েছে এক ব্যতিক্রমী দিক। দেবতার মূর্তির পরিবর্তে এখানে রয়েছে একটি পাথরের বই!

এই মন্দিরে নেই কোনও পুরোহিত, নেই কোনও নৈবেদ্য। দানের জায়গায় রয়েছে বইয়ের পাহাড়, আর প্রসাদ হিসেবে দর্শনার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বই। শিক্ষা এবং জ্ঞানচর্চাই এখানে একমাত্র আরাধনা। মন্দিরের ৩০ ফুট উঁচু বইয়ের ভাস্কর্যে মালয়ালম ভাষায় লেখা— ‘জ্ঞানই ঈশ্বর, ধর্ম হল প্রশস্ত চিন্তাভাবনা, বিনয়ের সঙ্গে জ্ঞানচর্চাই পথ।’

২০২১ সালের ৪ মার্চ এই মন্দিরের দ্বার প্রথমবার জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকে এটি হয়ে উঠেছে পাঠক, লেখক ও গবেষকদের মিলনস্থল। এখানে বই পড়া, লেখালেখি, বইয়ের মেলা এবং সাহিত্য উৎসব নিয়মিত আয়োজিত হয়। চারপাশে সবুজ প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরে কোনও ধর্মীয় বিভেদ নেই। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এখানে আসতে পারেন, কারণ বিশ্বাস করা হয়— জ্ঞানই একমাত্র ঐক্যের শক্তি।

এই ব্যতিক্রমী মন্দিরের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন মালয়ালি লেখক প্রপোয়িল নারায়ণন। ৩৫ বছর ধরে তিনি এই স্বপ্ন বুনেছেন এবং পরিশ্রম করে তা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। সাহিত্য ও শিক্ষাকে জীবনের একমাত্র ধর্ম হিসেবে মানেন তিনি। নিজের দুই একর পৈতৃক সম্পত্তির উপর তৈরি করেছেন এই জ্ঞানের মন্দির। কলেজে শিক্ষকতা করে উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করে, তিনি নিজের টাকাতেই এই মন্দির নির্মাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৭.৬ কোটি টাকা।

নারায়ণন চান, এই মন্দির স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক। তিনি একে ‘এঝুথুপুরা’ (লেখালেখির কুটির) হিসেবে পরিচিত করতে চান। বর্তমানে এখানে তিনটি কুটির তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও সাতটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

কেরল, যেখানে শিক্ষার হার ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি, সেখানে ‘নবপুরম মথথিথা দেবালয়ম’ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানে ঈশ্বর নয়, পূজিত হয় বই ও শিক্ষা— কারণ, প্রকৃত ধর্ম হলো জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত চিন্তা।

Related Articles