বিচারপতির বাড়িতে উদ্ধার টাকা, সংসদে আলোচনা চাইল কংগ্রেস
Money recovered from judge's house, Congress seeks discussion in Parliament

Truth Of Bengal: দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনাএবার সংসদে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চেয়ে সংসদে মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করতে চায় কংগ্রেস। সোমবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে এই বিষয়ে নোটিশ জমা দেন দলের দুই সাংসদ মনিকম টেগোর এবং রেণুকা চৌধরি। মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিসে বলা হয়েছে, ‘বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’
বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রাজ্যসভার বিজেপি দলনেতা জেপি নড্ডা এবং বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের। বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের বিষয়টি সামনে আসতেই বিষয়টি রাজ্যসভায় তুলেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। রাজসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বলেছিলেন, এই বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনার জন্য তিনি সংসদের উচ্চকক্ষের দলনেতা এবং বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
অন্যদিকে, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়িথেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলসাংসদ অভিষেকবন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে এই মুহূর্তে দিল্লিতে অভিষেক। সেখানেই তিনি বলেন, ‘মানুষ দেখুক কী অবস্থা। যাঁদের উপর বিচারব্যবস্থার ভার, তাঁদের বাড়িতেই কাড়ি কাড়ি টাকা উদ্ধার। বিচারব্যবস্থার কী করুণ দশা!’
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিযশবন্ত বর্মাকেদিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতিদের রস্টার থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বিতর্কিত ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের দাবিও জোরাল হচ্ছে। তাঁর শাস্তির দাবি জোরালো হচ্ছে।
আইনজীবী মহলের প্রশ্ন, কেন ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে না? সুপ্রিম কোর্টে সেই দাবিতে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। আইনজীবী ম্যাথুজ নেদুম্পরার দায়ের করা ওই মামলায় দাবি করা হয়েছে, বিচারপতিরা যেভাবে সরাসরি ফৌজদারি মামলা থেকে যে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
এর মধ্যেই বিচারপতি বর্মাকে ডিউটি রস্টার থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বিচারপতি বর্মাকে তাৎক্ষণিক দ্রুততার ভিত্তিতে তাঁর সব কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যতদিন না নতুন কোনও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ততদিন তিনি কাজে যোগ দিতে পারবেন না। সব মিলিয়ে বেশ বিপাকে বিচারপতি যশবন্ত বর্মা।
আগের দিন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির বাড়ির ছবি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তের রিপোর্ট আপলোড করা হয় শীর্ষ আদালতের ওয়েবসাইটে। বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্তবলে জানা যায় কলেজিয়াম সূত্রে।সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গুদামঘরে ভর্তি পোড়া টাকা! শনিবার শীর্ষ আদালত পেশ করা হয় ২৫ পাতার তদন্ত রিপোর্ট। রিপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো আপলোড করা হয়।দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং দিল্লি পুলিশের কমিশনার সঞ্জয় আরোরা ওই ছবি সংগ্রহ করেন।
তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই কলেজিয়ামের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই রিপোর্ট আপলোড এবং ছবি আপলোড করা হয় শীর্ষ আদালতের ওয়েবসাইটে। বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত, এমনটাই জানা যায় কলেজিয়াম সূত্রে।
বিচারপতি যশবন্তবর্মার বাংলোর স্টোররুমে টাকার পাহাড় মজুত ছিল বলে জানা যায়। আগুন থেকে রক্ষা পায়নি ওই স্টোররুম। যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, বান্ডিল বান্ডিল টাকা পড়ে রয়েছে মেঝেতে। আগুনে কিছু বান্ডিল পুড়ে গিয়েছে। অর্ধেক পুড়ে গিয়েছে কিছু আগুন নেভাতে দমকল বাহিনীর ছোড়া জলে ভিজে গিয়েছে কিছু বান্ডিল। ছাই, কালিমাখা অবস্থাতেও পড়ে রয়েছে টাকা।
বিচারপতি যশবন্ত বর্মা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করছেন। এই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভিডিয়োটির বিষয়বস্তু দেখে আমি স্তম্ভিত। যা দেখানো হয়েছে, তা ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায়নি। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে, আমাকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র এটা।’ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে যে ২৫ পাতার রিপোর্ট আপলোড করা হয়েছে, তারই অংশ ওই ভিডিয়ো। দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরা এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করেন।
ফলে এই ভিডিয়োর সত্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। সব মিলিয়ে বেশ জলঘোলা হচ্ছে বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা। সেইসঙ্গে ওই বিচারপতির শাস্তি দাবি জোরালো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।