‘মাইক্রোসফ্ট কা বাপ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’- বিপর্যয়ের মধ্যেও স্বাভাবিক পরিষেবায় ভারতীয় রেল, কীভাবে?
'Microsoft Ka Baap Indian Railways' - Indian Railways in normal service despite disaster, how?

The Truth Of Bengal : বিশ্বজুড়ে মাইক্রোসফ্ট বিপর্যয় ঘটে। দেশে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিভ্রাট বড় প্রভাব ফেলেছিল। মাইক্রোসফ্ট ব্যবহারকারীরা এই বিপর্যয়ের ফলে চরম সমস্যার সম্মুখীন হন। গোটা বিশ্বজুড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উড়ান পরিষেবা। বিপর্যস্ত হয় ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল, মিডিয়া সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও। ক্রাউডস্ট্রাইকের ত্রুটিপূর্ণ আপডেটের কারণে এই বিপর্যয় বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছে। সারা বিশ্বের মত ভারতেও এর প্রভাব পড়েছিল। দিনের ব্যস্ত সময়ে বিভিন্ন অফিসের কম্পিউটার স্ক্রিনে হঠাৎ নীল পর্দা নেমে আসে। সঙ্গে ছোট্ট একটা বার্তা – ” ইয়োর ডিভাইস রান ইনটু আ প্রবলেম অ্যান্ড নিডস টু রিস্টার্ট। উই আর জাস্ট কালেক্টিং সাম এরর ইনফো, অ্যান্ড দেন উই উইল রিস্টার্ট ফর ইউ। ”
যখন গোটা দেশ, গোটা বিশ্ব মাইক্রোসফ্ট বিভ্রাটের কারণে বিপর্যস্ত হওয়ার জোগাড় তখন স্বাভাবিক পরিষেবা বহাল রাখে ভারতীয় রেলওয়ে। ভারতীয় রেল সূত্রে জানানো হয়েছে প্রত্যেকটি ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়েছে। সঠিক সময়ে সেই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছায়। মাইক্রোসফট বিপর্যয়ের কোন প্রভাব ভারতীয় রেলের উপর পড়েনি। আর এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে। কিভাবে সম্ভব হলো এটা? সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে এমন মন্তব্য লেখা হয়েছে, ‘মাইক্রোসফ্ট কা বাপ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’। বিভিন্ন মহলে এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। যখন উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে ব্যাঙ্ক, বিমান, টেলি যোগাযোগ, মিডিয়া সহ অন্যান্য পরিষেবা পরিচালিত হচ্ছে তখন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কিভাবে এই বিপর্যয় থেকে বাঁচল। কিভাবে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে এই বিপর্যয়ের আজ রেল পরিষেবার ওপর পড়তে দিল না। এর পেছনের রহস্য বা গল্প কোথায়?
ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রেলের টিকিট সিস্টেম কন্ট্রোল অফিস অটোমেশন এবং অন্যান্য রেল পরিষেবা গুলি এই বিপর্যয়ের কারণে প্রভাবিত হয়নি। এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় রেলের প্রশংসা করেছেন বহু ব্যবহারকারী। এক হ্যান্ডেলে এক ব্যবহারকারী এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘মাইক্রোসফ্ট কা বাপ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’। একজন মন্তব্য করেছেন ভারতীয় রেল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিবহন।
ভারতীয় রেল ব্যবস্থা পরিচালনায় নিজস্ব প্রযুক্তি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। ভারতীয় রেলের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি এবং ই গভর্নেন্স এর কেন্দ্র হল সিআরআইএস। যার অর্থ হল সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম। সি আর আই এস হলো ভারত সরকারের রেলপথ মন্ত্রকের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। রেলের নিজস্ব এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ পরিসেবা প্রদানকারী। সি আর আই এস রেলওয়ে টিকিট বুকিং এর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যার মধ্যে রয়েছে প্যাসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেম এবং আন রিজার্ভ টিকেটিং সিস্টেম। যা ইউটিএস নামে পরিচিত। রেলের লক্ষ লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকিট বুকিং বা প্রয়োজনীয় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটেন। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক জুড়ে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে অপটিমাইজ করে। রেলের ট্রাক এবং সিগন্যালিং সম্পর্কে রিয়েল টাইম তথ্য সরবরাহ করে। রেলের এই নিজস্ব প্রযুক্তি ধরেই রেল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়।
রেলের এই নিজস্ব প্রযুক্তি থাকার কারণে গোটা বিশ্বজুড়ে মাইক্রোসফট বিপর্যয়ের পরও ট্রেন পরিষেবায় কোনরকম প্রভাব পড়েনি। যেখানে বিমান পরিষেবা চরম বিপর্যস্ত হয়, বিমানবন্দর গুলির কাজ এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায় তখন রেল পরিষেবা স্বাভাবিক থাকে। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান তার মন্ত্রক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফ্ট এর সাথে তার পরিষেবা গুলিতে বিপর্যয় নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এই বিপর্যয়ের কারণে দেশের এন আই সি নেটওয়ার্ক এ কোন প্রভাব পড়েনি বলে তিনি জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক্স প্যান্ডেলে উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে বিভিন্ন বিভাগ গুলোকে চিহ্নিত করা হয় এবং সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।