দেশ

২০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে বাংলাদেশ, বললেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা

Bangladesh owes Tk 200 crore electricity bill, said Tripura Chief Minister Manik Saha

Truth Of Bengal: ত্রিপুরার ২০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে বাংলাদেশের। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এনটিপিসি ইলেকট্রিসিটি ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় ত্রিপুরা প্রতিবেশী দেশকে ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে বিল বকেয়া থাকলেও প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ত্রিপুরা সরকার।

পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মানিক সাহা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আমাদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা দেয়নি। বকেয়া (পরিমাণ) প্রতিদিন বাড়ছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ তাদের বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করবে যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত না হয়।’ ঢাকা বকেয়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ত্রিপুরা সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে কিনা জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের ভূখণ্ড বা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা হয়েছে। অতএব, কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, ত্রিপুরা সরকার একটি চুক্তি অনুসরণ করে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। পাশাপাশি তিনি জানান, ‘কিন্তু আমি জানি না, যদি তারা বকেয়া শোধ না করে তবে আমরা বাংলাদেশে কতদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারব।’

ত্রিপুরা ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। দক্ষিণ ত্রিপুরার পালাটানায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানির (ওটিপিসি) গ্যাস-ভিত্তিক ৭২৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

এদিকে আদানি পাওয়ার গোষ্ঠীর বিদ্যুতের বিলও বকেয়া রেখেছে বাংলাদেশ। আদানি পাওয়ার গোষ্ঠী ঝাড়খণ্ডের ১,৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করে। বাংলাদেশ ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার না দেওয়ার কারণে আগস্ট মাসে প্রায় ১,৪০০-১,৫০০ মেগাওয়াট থেকে সরবরাহ কমিয়ে ৫২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে।

বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই হামলার কারণে ত্রিপুরার উপর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে সাহা বলেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে এখনও তার রাজ্য ত্রিপুরায় কোনও বড় ধরনের অনুপ্রবেশ নেই। তিনি বলেন, ‘তবে আমরা সীমান্তের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যেহেতু সীমান্তে অনেক ফাঁক রয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত, আগস্টে সে দেশে বর্তমান অশান্তি শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে বড় কোনও অনুপ্রবেশ নেই।’

ত্রিপুরা তার উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিমে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং এর আন্তর্জাতিক সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৮৫৬ কিমি, যা তার মোট সীমান্তের ৮৪ শতাংশ। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

মানিক বলেন, ‘আমরা এর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশি পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় যেসব পণ্য আসে তার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, স্টোন চিপস ও ইলিশ মাছ।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এটা তাদের ক্ষতি।’ বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগরতলা ও ঢাকার মধ্যে রেললাইন চালু হলে তা উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত উপকারী হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কোনও বাধা ছাড়াই ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হলে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হবে। প্রসঙ্গত আগরতলা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি রাস্তার দূরত্ব প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশের আখাউড়ার সঙ্গে আগরতলার সংযোগকারী একটি রেললাইন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ নভেম্বর, ২০২৩-এ উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ভারতে ৫.৪৬ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ৬.৭৮ কিলোমিটার। ভারতীয় অংশের ব্যয় ছিল ৭০৮.৭৩ কোটি টাকা, যা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশের ব্যয় ছিল ৩৯২.৫২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের অংশটি ভারতের বিদেশমন্ত্রক দ্বারা অর্থায়ন করা হয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে দ্বারা সম্পাদিত হয়। যদি বাংলাদেশে ওভারল্যান্ড পরিবহণ অধিকার অনুমোদিত হয়, তবে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় প্রায় ৩০ ঘণ্টা থেকে প্রায় ১০ ঘন্টায় নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কলকাতা ও আগরতলার মধ্যে ট্রেনপথের বর্তমান দূরত্ব ১,৫৮১ কিলোমিটার এবং এর জন্য অসমের গুয়াহাটি এবং লুমডিং হয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশ তাদের রুট ব্যবহারের অনুমতি দিলে এই দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটারে নেমে আসবে।

Related Articles